পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৪৭

 যে শিশুটি সব চেয়ে ছোট, তাহার প্রায় সব শেষ হইয়া আসিয়াছে। একেবারে গতিশক্তি রহিত। মুদ্রিত চোখের পাতার ধারে-ধারে যে মাছি বসিয়াছে, তাহাদের তাড়াইবারও শক্তি নাই। রন্ধনার্থ ছাগাদিপশুর অন্ত্র বাহির করিয়া ফেলিলে যেরূপ হয়, উহাদের উদর সেইরূপ দেখিতে হইয়াছে। রাস্তায় সানের উপর শরীরকে ক্রমাগত টানাহ্যাঁচ্‌ড়া করায়, পিঠের হাড় মাংসের মধ্যে বিঁধিয়া গিয়াছে।

 যাহাই হউক, এই শস্যের বস্তাগুলা রাখিবার জন্য উহাদিগকে এক্ষণে সরানো আবশ্যক। যে শিশুটি সব চেয়ে বড়, সে অতীব বাৎসল্যসহকারে ছোটটিকে কাঁধে করিয়া লইল এবং মধ্যমটির হাত ধরিল; কেন না, মধ্যমটির এখনো একটু চলিবার শক্তি আছে। এইরূপে উহারা নীরবেনিঃশব্দে সেখান হইতে প্রস্থান করিল।

 ছোটটির চক্ষু মুহূর্ত্তের জন্য একবার উন্মীলিত হইল। আহা! উহার চোখের দৃষ্টি অন্যায়রূপে দণ্ডিত নির্দ্দোষ বধ্যজনের দৃষ্টির মত। যন্ত্রণার ভাব,—তিরস্কারের ভাব,—কি হেতু সর্ব্বজনপরিত্যক্ত হইয়া এতটা কষ্টভোগ করিতেছে, তজ্জন্য বিস্ময়ের ভাব—সমস্তই যেন ঐ দৃষ্টিতে পরিব্যক্ত!...কিন্তু ক্ষণপরেই তাহার সেই মুমূর্ষু চক্ষু আবার নিমীলিত হইল; আবার মাছিগুলা আসিয়া চোখের পাতার উপর বসিল। বেচারা শিশুটির ক্ষুদ্র মস্তক তাহার বড় ভায়ের শীর্ণ কাঁধের উপর আবার ঢলিয়া পড়িল।

 পা একটু টলিল; কিন্তু চোখে জল নাই; মুখে একটি কাতরোক্তি নাই; শিশু-ধৈর্য্য ও শিশু-আত্মত্যাগের যেন সাক্ষাৎ মূর্ত্তি—এইরূপে সে, ভাই-দুটিকে লইয়া চলিয়া গেল। বড়টি আপনাকে বাড়ীর কর্ত্তা বলিয়া মনে করে। তাহার পর সে যখন দেখিল, এতটা দূরে আসিয়াছে যে, এখন আর কাহারো পথের অন্তরায় হইবার সম্ভাবনা নাই, তখন খুব সতর্কতার সহিত, অতি সন্তর্পণে ভাইদুটিকে রাস্তার সানের উপর আবার শুয়াইয়া দিল এবং নিজেও তাহাদের পার্শ্বে শয়ন করিল।