পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৫১

সোজা-সোজা ও মার্ব্বেল দিয়া বাঁধানো;—ঝাউ, তাল, গোলাপ ও নারাঙ্গিকুঞ্জে বিভূষিত। নারাঙ্গিফুলের গন্ধে চারিদিক্‌ আমোদিত। ছায়ায় বসিয়া বিশ্রাম করিবার জন্য সর্ব্বত্রই মার্ব্বেল-পাথরের আরামকেদারা। নর্ত্তকীদের জন্য স্থানে-স্থানে চতুষ্ক-মণ্ডপ এবং রাজকুমারদিগের স্নানের জন্য মার্ব্বেলে বাঁধানো চৌবাচ্ছা। এখানে ময়ুর আছে, বানর আছে; এমন কি, নারাঙ্গিগাছের তলায়, শিকারে বহির্গত ছুঁচাল-মুখ তস্করবৃত্তি শৃগালদিগকেও দেখিতে পাওয়া যায়।

 অবশেষে সেই বৃহৎ সবোবর! ইহাও ভীষণ প্রাচীরে আবদ্ধ। দুইতিনবৎসরব্যাপী অনাবৃষ্টির ফলে ইহার প্রায় অর্দ্ধেক জল শুকাইয়া গিয়াছে। ইহার পাঁকের উপর শতবর্ষজীবিত গণ্ডশৈলপ্রায় প্রকাণ্ডপ্রকাণ্ড কুম্ভীর নিদ্রা যাইতেছে। এই সময়ে শুক্নবস্ত্রধারী একজন বৃদ্ধ ঘাটের সিঁড়ির উপর আসিয়া, মস্‌জিদের মুয়েজ্জিনের মত সুস্পষ্টস্বরে টানাসুরে কি-একটা ক্রমাগত আবৃত্তি করিতে লাগিল;—নানাপ্রকারবাহুভঙ্গি-সহকারে কুমীরদিগকে ডাকিতে লাগিল। তখন কুমীরেরা জাগিয়া উঠিল। প্রথমে ধীরে ধীরে ও অলসভাবে,—ক্ষণপরেই—ক্ষিপ্রভাবে-চটুলভাবে সাঁতার দিয়া নিকটে আসিল। তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে বড়-বড় কচ্ছপও আসিল। তাহারাও ডাক শুনিয়াছে। তাহারাও খাইতে চায়। যেখানে সেই বৃদ্ধ এবং দুইজন ভৃত্য মাংসের ঝুড়ি হস্তে দাঁড়াইয়া ছিল, সেই সোপানপংক্তির নীচে আসিয়া উহারা চক্রাকারে সমবেত হইল এবং সীসাবর্ণ শ্লেষ্ম-চট্‌চটে মুখ ব্যাদান করিয়া ঐ সব মাংস গিলিবার জন্য প্রস্তুত হইল; তখন উহাদের মুখের মধ্যে ছাগলের পাঁজরা, ভেড়ার পা, ফুসফুস, অস্ত্রাদি নিক্ষিপ্ত হইল।

 কিন্তু বাহিরের রাস্তায়, সেই সব ক্ষুধিত মনুষ্যদিগকে খাওয়াইবার জন্য মুয়েজ্জিনের কণ্ঠস্বরে কেহই তাহাদিগকে ডাকিতেছে না। সেই নবাগত ভিক্ষুকেরা এখনো ইতস্তত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে; কেহ তাহাদের পানে