পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

লোকদের পরিচ্ছদ, পাগ্‌ড়ী, মুখ,—নানারঙে রঞ্জিত হইল। যে সকল দুর্ভিক্ষপীড়িত কঙ্কালসার ক্ষুদ্র বালকেরা ভূতলশায়ী হইয়া এই সমারোহযাত্রা দেখিতেছিল,—এমন কি—তাহাদের উপরেও এই চূর্ণমুষ্টির বর্ষণ হইতে লাগিল। তাহাদের দুর্ব্বল হস্ত ক্ষিপ্রতার সহিত আপনাদিগকে রক্ষা করিতে না পারায়, তাহাদের চক্ষু সেই চূর্ণে আচ্ছন্ন হইয়া গেল।

 সহসা দিবাবসান হইল। চতুর্দ্দিক্‌স্থ সেই শাদা ফুলের নক্সা-কাটা একঘেয়ে গোলাপী রং ক্রমে স্নান হইয়া আসিল। আকাশ Periwinkle ফুলের রং ধারণ করিল। উহা ধূলায় এরূপ আচ্ছন্ন যে, রজতরঞ্জিত চন্দ্রমাও পাংশুবর্ণ বলিয়া মনে হইতে লাগিল। ঘুমাইবার জন্য পাখীর ঝাঁক নীচে নামিয়া আসিল। গোলাপী প্রাসাদসমূহের কানাচের উপর,—পায়রা ও কাক কৃষ্ণবর্ণ দীর্ঘরজ্জুর আকারে সারিবন্দি হইয়া ঘেঁষাঘেঁষি বসিল। কিন্তু শকুনি ও চিলেরা এখনো বিলম্ব করিতেছে—এখনো গয়ংগচ্ছভাবে আকাশে ঘোরপাক দিতেছে। যে সকল মুক্ত বানর গৃহাদির উপর বাস করে, এখন নিদ্রার সময় উপস্থিত হওয়ায়, তাহারা চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে;—থাবার উপর ভর দিয়া, উর্দ্ধপূচ্ছ হইয়া, পরস্পরকে অনুধাবন করিতেছে। উহাদের অপূর্ব্ব ছায়ামূর্ত্তিগুলা গৃহছাদের ধারে ধারে ছুটাছুটি করিতেছে। নীচে, বড় রাস্তা জনশূন্য হইয়া পড়িয়াছে। কেন না, প্রাচ্য নগরসমূহে, রাত্রিকালে কোন কাজকর্ম্ম হয় না।

 একটা পোষ চিতাবাঘিনী শুইবার জন্য এখনি প্রাসাদে যাইবে। টুপিটা তাহার পাশে রহিয়াছে,—একটা রাস্তার কোণে বেশ ভালমানুষের মত উবু হইয়া বসিয়া আছে। তাহার পরিচারকেরাও তাহাকে ঘিরিয়া ঐরূপভাবে বসিয়া আছে। তাহাদের মধ্যে সেই পুচ্ছধারী ভৃত্যটিও আছেন। দুই-পা দূরে, একদল দুর্ভিক্ষপীড়িত বালক ভূমিতে পড়িয়া