পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৬
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

দিবাবসানের সঙ্গে-সঙ্গেই সমস্ত কাজকর্ম্ম বন্ধ হইয়া যায়। চতুদ্দিক্‌স্থ মাঠময়দান একেবারেই নিস্তব্ধ। দূর দিগন্তে, মনে হয়, যেন কুয়াসা হইয়াছে। উহা ধূলি বই আর কিছুই নহে। সমস্তই শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। শাদা গুঁড়ায় ঢাকা মাটির উপর, মরা-গাছের উপর, চন্দ্রালোক পতিত হইয়াছে। আবার এই অমল শুভ্রতার উপর হঠাৎ নৈশশৈত্যের আবির্ভাব হওয়ায় মনে হইতেছে যেন তুষার পড়িয়াছে, শীতঋতু আসিয়াছে, যে-সব আসন্নমৃত্যু দুর্ভিক্ষপীড়িত বালকেরা নগ্নাবস্থায় ভূতলে পড়িয়া কষ্টে শ্বাসগ্রহণ করিতেছে, না জানি, তারা এখন শীতে কতই কাতর। এখন খুবই ঠাণ্ডা পড়িয়াছে।

 বাহিরের ন্যায়, নগরপ্রাচীরের অভ্যন্তরে ও সমস্ত নিস্তব্ধ। কদাচিৎ কোথাও, দেবালয় হইতে চাপা-সঙ্গীতধ্বনি শোনা যাইতেছে। তা ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। এই সকল দেবালয়ের গজমূর্ত্তিশোভিত উচ্চ সোপান দিয়া শুক্লপরিচ্ছদধারী কতকগুলি লোক এখনো উঠা-নামা করিতেছে; তা ছাড়া একটিও প্রাণী নাই। রাস্তাঘাট সমস্তই শূন্য। লোকের চলাচল না থাকায়, এই সকল রাস্তা যেন আরো চওড়া ও বিশাল বলিয়া মনে হইতেছে। নৈশ নিস্তব্ধতার মধ্যে, এই গোলাপী নগর[১] চন্দ্রালোকেও গোলাপী দেখাইতেছে; এবং ইহার সৌধপ্রাসাদ ও প্রাসাদের দস্তুর চূড়াবলী যেন আরো বর্দ্ধিতায়তন হইয়া উঠিয়াছে।

 দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় যেখানে চাউলের বস্তা গাদা করিয়া রাখা হইয়াছে এবং যেখানে বেত্রধারী রক্ষিপুরুষেরা পাহারা দিতেছে—সেই পদপথের উপর এবং সেই বস্তাগুলার পার্শ্বে, এখনো সেই সব কালো-কালো পঙ্কালমূর্ত্তির গাদা! দূরদূরান্তরে, ছোট-ছোট পাথরের কুলুঙ্গি-ঘর যাহা দিনমানে জনতার মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল, তাহা এখন নেত্রসমক্ষে প্রকাশ পাইতেছে।

  1. জয়পুর—অনুবাদক