পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

অবস্থিত হইয়া, রাত্রির প্রতীক্ষা করিতেছি। ইহা যেন একটা গরুড়পক্ষীর প্রকাণ্ড নীড়; পূর্ব্বে ধনরত্নে পূর্ণ ছিল; শত্রুর ভীতিজনক ও দুরধিগম্য ছিল। কিন্তু আজ ইহা শূন্য; একটা পরিত্যক্ত বৃহৎ নগরের মধ্যে অবস্থিত; কতকগুলি ভৃত্য ইহার রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত।

 আমি আকাশের খুব উচ্চদেশে উঠিয়াছি। সুচারুরূপে খোদিত যে সব প্রস্তরফলক ছাদের গরাদে-বেষ্টনের কাজ করিতেছে, সেই সব প্রস্তরের উপর হইতে ঝুঁকিয়া দাঁড়াইলে দেখিতে পাওয়া যায়—নীচে সুগভীর খাত মুখব্যাদান করিয়া আছে; সেই খাতের তলদেশে,—গৃহ, মন্দির, মস্‌জিদ্‌ প্রভৃতির ভগ্নাবশেষ।

 যদিও আমি খুব উচ্চে উঠিয়াছি,—তথাপি আমার চতুর্দ্দিকে, আরো কত উচ্চতর ভূমি রহিয়াছে। যে শৈলভূমির উপর এই প্রাসাদটি অধিষ্ঠিত, উহা চক্রাকারে-পরিবেষ্টিত আর একটা উচ্চতর পর্ব্বতমালার কেন্দ্রস্থল। আমার চতুর্দ্দিকে, সরু-সরু তীক্ষ্নাগ্র লালপাথরের বড়-বড় শৈলচূড়া;—সমস্তই প্রাকারে বেষ্টিত। এই প্রাকারাবলী—উচ্চতম চূড়াপ্রান্ত পর্য্যন্ত বরাবর সমান চলিয়া গিয়াছে; এবং এই দস্তুর বপ্রের করাতী-দন্ত, পীতাভ আকাশের গায়ে, অতীব নির্দ্দয়ভাবে অঙ্কিত রহিয়াছে। এই অন্তরীক্ষের প্রাচীরটি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড প্রস্তরখণ্ডের দ্বারা গঠিত এবং এরূপ সঙ্কটস্থানের উপর স্থাপিত যে, উহা দুরধিগম্য বলিলেও হয়;—একটা চক্রের পরিধিরূপে কয়েকক্রোশ ঘিরিয়া রহিয়াছে। ইহা অতীতযুগের এমন একটি কীর্ত্তি—যাহার ঔদ্ধত্য ও প্রকাণ্ডতায় একেবারে বিস্ময়বিহ্বল হইয়া পড়িতে হয়। এই সব প্রাকারাদি এত উচ্চে উঠিয়াছে—এমন বেপরোয়াভাবে খাড়া হইয়া রহিয়াছে যে, দেখিলে মাথা ঘুরিয়া যায়। বহু পুরাকালে, এই নগরের জন্য,—নিম্নস্থ এই রাজপ্রাসাদের জন্য,—একটি অপূর্ব্ব প্রাচীর নির্ম্মাণ করা আবশ্যক বিবেচিত হইয়াছিল; তাই, এই চতুদ্দিক্‌স্থ শৈলমালাকে দুর্ভেদ্য গিরিদুর্গে পরিণত করা হয়। এই প্রাকারপরিধির মধ্যে