পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৫৯

প্রবেশ করিবার একটিমাত্র ফুকর আছে; ইহা একটা বৃহৎ প্রাকৃতিক “ফাটলের” মত; উহার মধ্য দিয়া সুদূরপ্রসারিত একটা মরুভূমি অস্ফুটভাবে পরিলক্ষিত হয়।

 এইখানে আসিবার জন্য, আমি দিবাবসানে জয়পুর হইতে ছাড়িয়াছি। যে সকল ভগ্নাবশেষ আমার চারিদিকে ঘিরিয়া আছে,—ইহাই পুরাতন রাজধানী অম্বর। দুই শতাব্দী হইল, ইহার স্থান জয়পুর অধিকার করিয়াছে।[১]

 কতকগুলি পথপ্রদর্শক সঙ্গে লইয়া—এবং “সুন্দর গোলাপীনগরের” রাজা আমার ব্যবহারের জন্য যে ঘোড়া দিয়াছেন, সেই সব ঘোড়া লইয়া আমি যাত্রা করিয়াছি। এই অম্বর-প্রাসাদে যে সব ছাদের উপর আমি এইমাত্র উঠিয়াছি—এই সব ছাদে বর্ত্তমান রাজার পূর্ব্বপুরুষেরা পূর্ব্বে বাস করিতেন। আমি জয়পুরের রমণীয় পরীদৃশ্য ও দান্তে-বর্ণিত ভীষণ নরকদৃশ্য,—এই উভয়ই এড়াইবার জন্য তাড়াতাড়ি জয়পুর হইতে বাহির হইয়া এই পল্লিপ্রদেশে আসিয়াছি। আর-কিছু না হোক্‌—অন্তত এখানে সমস্তই শেষ হইয়া গিয়াছে,—এখন শুধু মৃত্যুর নিস্তব্ধতা বিরাজ করিতেছে।

 কিন্তু আমি জানিতাম—দুর্গপ্রাকারের দ্বারদেশ পার হইবামাত্র, আমাকে আরো একটা ঘোরতর ভীষণ পথ অতিক্রম করিতে হইবে। যুদ্ধের অনেকদিন পরে, যুদ্ধক্ষেত্রের মত একটা-কোন দৃশ্য হয় ত আমাকে দেখিতে হইবে;—হয় ত দেখিতে হইবে, সূর্য‍্যাতপশুষ্ক রাশি রাশি মৃতশরীর বহুদিন হইতে ইতস্তত পড়িয়া রহিয়াছে; হয় ত দেখিব, কতকগুলা শবশরীর নিশ্বাস ফেলিতেছে,—নড়িতেছে—কখন-কখন উঠিয়া দাঁড়াইতেছে,—আমার অনুসরণ করিতেছে এবং কষ্টের আকস্মিক আবেগে প্রার্থনাচ্ছলে আমার হস্ত জাপ্‌টাইয়া ধরিতেছে।


  1. ১৭২৮ খৃষ্টাব্দে জয়পুর স্থাপিত হয়।