পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৬১

ব্যাপী রাশিরাশি ভগ্নাবশেষ; তাহার পরেই পল্লিপ্রদেশের প্রকৃত মরুভূমি; মরা-গাছের বাগান-বাগিচার মধ্যে কত গম্বুজ, কত মন্দির, স্বচ্ছপ্রস্তরে নির্ম্মিত কত চতুষ্কমণ্ডপ একটার পর একটা চলিয়াছে, তাহার আর অন্ত নাই। বানর, কাক ও শকুনি ছাড়া এখানে আর কেহই বাস করে না। এদেশের প্রত্যেক নগরের আশপাশে এই সকল জীবের নিত্য গতিবিধি। এই সমস্ত শ্মশানভূমি, পূর্ব্ববর্ত্তী সভ্যতার ধ্বংশাবশেষে সমাচ্ছন্ন।

 বলা বাহুল্য, কর্ষিত ক্ষেত্রের চিহ্নমাত্রও আর লক্ষিত হয় না। জন প্রাণী নাই; কেবল মাছিতে গ্রামপল্লি ভরিয়া গিয়াছে।

 তাহার পর যখন গিরিমালার পাদদেশে—সেই লাল-পাথরের রাজ্যে আসিয়া পৌঁছিলাম, মনে হইল, যেন সর্ব্বত্রই জ্বলন্ত অঙ্গার। এমন কি, ছায়াময় স্থানেও, ধূলা-ভরা এমন একএকটা শুক্না দম্‌কা-বাতাস আসিতেছে যে, তাহাতে যেন মুখ একেবারে ঝল্‌সিয়া যায়।

 উদ্ভিজ্জের মধ্যে বড়-বড় cactus ছাড়া আর কিছুই নাই—সেই মরা-গাছগুলা শুধু খাড়া হইয়া রহিয়াছে;—সমস্ত শৈলখণ্ড উহাদের কণ্টকময় বৃন্তে কণ্টকিত।

 আমার দুইজন পথপ্রদর্শক পৃষ্ঠে ঢাল ও হস্তে বল্লম লইয়া অশ্বপৃষ্ঠে চলিয়াছে। বাহাদুর ও আক্‌বরের আমলে, সৈনিকদের এইরূপ সাজ ছিল।

 অপরাহ্ন পাঁচঘটিকার সময় সূর্য্যের প্রখরকিরণে আমাদের চক্ষু যেন ঝলসাইয়া গেল। অম্বরের রুদ্ধ-উপত্যকার গায়ে, যেখানে একটা সরু ফাঁক আছে, সেই ফাকঁটি অবশেষে আমাদের নেত্রগোচর হইল। একটা ভীষণ দ্বার, এই একমাত্র প্রবেশপথটিকে রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। তাহার পরেই হঠাৎ সেই প্রাচীন রাজধানীটি আমাদের নেত্রসমক্ষে উদ্ঘাটিত হইল। সান-বাঁধানো ঢালু সোপান দিয়া আমাদের ঘোড়ারা পিছ্‌লাইয়া পিছ্‌লাইয়া চলিতেলাগিল;—এইরূপে আমরা রাজাদিগের পুরাতন প্রাসাদে