পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৬৩

কাঠের—গজদন্তখচিত। কতকগুলা চৌবাচ্ছা, খুব উচ্চদেশে স্থাপিত, এখন উহাতে একটু জল রহিয়াছে। অন্তঃপুরমহিলাদের জন্য শৈলগর্ভ খনন করিয়া কতকগুলা স্নানাগার নির্ম্মিত হইয়াছে; এবং সকলের মধ্যস্থলে, প্রাচীরবদ্ধ একটা “ঝোলানো”-বাগান;—তাহার সম্মুখেই কতকগুলা অন্ধকেরে ঘর সমুদ্ঘাটিত—উহাই রাজকুমারীদিগের, রাণীদিগের ও অবরুদ্ধ সমস্ত সুন্দরীদিগের অন্তঃপুর। আরো উচ্চতর ছাদে উঠিবার উদ্দেশে যখন ঐখান দিয়া চলিয়া গেলাম, তখন দেখিলাম, শতবর্ষ-বয়স্ক নারাঙ্গিবৃক্ষসমূহের সৌরভে সমস্ত স্থানটা আমোদিত। কিন্তু এখানকার বৃদ্ধ রক্ষক অতীব তীব্রভাবে বানরদিগের নামে অভিযোগ করিয়া বলিতেছিল যে, উহারাই এখানকার মালিক বলিলেই হয়; উহাদের উৎপাতে সমস্ত নেবু হস্তগত হওয়া দুষ্কর।

 আমি এখন, এই শেষপ্রান্তবর্ত্তী ছাদটির উপর বসিয়া রাত্রির প্রতীক্ষা করিতেছি। চন্দ্রালোকে রাজসভার অধিবেশনের জন্য জম্‌কালো-বারণ্ডাবেষ্টন সমন্বিত এই ছাদ রাজারা নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। এখনি জ্যোৎস্না হইবে, আমিও জ্যোৎস্নালোকে এই স্থানটির সহিত একটু পরিচয় করিয়া লইব।

 চীল, শুকুনি, ময়ূব, ঘুঘু, তালচঞ্চু প্রভৃতি পক্ষীরা সকলেই এখন নিজনিজ নীড়ে শয়ন করিয়াছে; তাই এই পরিত্যক্ত প্রাসাদটি এখন আরো নিস্তব্ধ। উচ্চ শৈলমালার অন্তরালে সূর্য্য অনেকক্ষণ আমার নিকটে প্রচ্ছন্ন ছিল, কিন্তু এইবার নিশ্চয়ই অস্তমিত হইয়াছে। কেন না নীচেকার কেল্লার একটা ময়দানে কতকগুলি মুসলমান রক্ষিপুরুষ মেক্কার দিকে মুখ করিয়া নেমাজ করিতেছে। উহারা নেমাজের এই পবিত্র সময়টি যথাকালে ঠিক জানিতে পারে।

 ঠিক এই সময়ে রক্তাপ্লুত কালীমন্দির হইতেও একটা গহন-গম্ভীর ধ্বনি নিম্নদেশ হইতে আমার নিকট আসিয়া পৌঁছিল। ব্রাহ্মণ্যিক