পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

প্রবেশ করিলে দুর্ভিক্ষের দুঃস্বপ্নটা যেন প্রায় ভুলিয়া যাইতে হয়। এখানকার লোকের এতটা অর্থসম্বল আছে যে, তাহারা শস্যাদি অনায়াসে ক্রয় করিতে পারে; এবং তাহাদের এখনো এতটা জলসঞ্চয় আছে সে, তাহাতে উদ্যানাদি সংরক্ষিত হইতে পারে।

 আতর প্রস্তুত করিবার জন্য ও সাজসজ্জার জন্য নগরচত্বরে ঝুড়িঝুড়ি গোলাপফুল বিক্রী হইতেছে।

 গোয়ালিয়ার আসলে হিন্দুনগর; কিন্তু এখানকার লোকের পাগ্‌ড়ীগুলা মুসলমানীধরণের। তবে একরকম বিশেষধরণের পাগ্‌ড়ী আছে—যাহা খুব আঁটসাঁট করিয়া জড়াইয়া বাঁধা; বর্ণভেদ অনুসারে এই সকল পাগ্‌ড়ী অসংখ্যরকমের। কোনটার শাঁখের মত গড়ন, কোনটার বা একাদশ-লুইরাজার আমলের টুপির মত গড়ন। আবার একরকম পাগ্‌ড়ী আছে—যাহার লম্বা দুই পাশ উর্দ্ধে উত্তোলিত ও দুইদিকে সিং-বাহিরকরা। এই পাগ্‌ড়ীগুলা,—লালরঙের কিংবা পীচফল-রঙের, কিংবা ফিঁকা-সবুজ-রঙের রেশমী কাপড়ের। হাইদ্রাবাদে যেরূপ দেখা গিয়াছিল—সেইরূপ এখানেও, জনতার শুভ্র পরিচ্ছদের উপর—রাস্তার শাদা রঙের উপর, পাগড়ীর এই টাট্‌কা রংগুলা যেন আরো বেশী ফুটিয়া উঠিয়াছে। এখানকার লোকেরা ললাটে যে শৈবচিহ্ন ধারণ করে, তাহা দেখিতে কতকটা শাদা প্রজাপতির মত, ও খুব সযত্নে চিত্রিত। ললাটের মধ্যস্থলে একটা বড় লাল ফোঁটা;—তাহার দুইপাশ হইতে যেন দুইটা ডানা বাহির হইয়াছে। পক্ষান্তরে এখানকার বৈষ্ণবচিহ্ন দাক্ষিণাত্যের বৈষ্ণবচিহ্নেরই মত।

 গোয়ালিয়ারকে ঘোড়সওয়ারের নগর বলিলেও হয়;—সর্ব্বত্রই দেখা যায়, ঘোড়সওয়ারেরা জরির জিন-লাগানো তেজী ঘোড়ার উপর চড়িয়া ছুটিয়া চলিয়াছে কিংবা চক্রাকারে ঘুরিতেছে; অনেকে হাতীর উপরেও চড়িয়াছে, দলে-দলে উষ্ট্রগণ সারিবন্দি হইয়া চলিয়াছে; অশ্বতরী ও ছোট ছোট ধূসরচর্ম্ম গর্দ্দভেরও অভাব নাই।