পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

 এ কথা নিশ্চিত, এ দেশের উচ্চবর্ণের মধ্যে আর্য্যজাতীয় দৈহিক শ্রীসৌন্দর্য্য চরম উৎকর্ষে উপনীত হইয়াছে,—উহাদের মুখের রং প্রায় ইরাণীদিগেরই ন্যায় ফর্শা।

 স্বচ্ছ মল্‌মল্‌বস্ত্রে রোমীয় ধরণে আবৃত হইয়া এবং উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা বিচ্ছুরিত করিয়া যে সকল রমণী দলে-দলে রাস্তায় চলিয়া বেড়াইতেছে, তাহাদের কি সুন্দর চোখ!—কি অনিন্দ্যসুন্দর দেহের গঠন!

 তালীবনসঙ্কুল ভারত হইতে—তাম্রবর্ণ নগ্নতার ভারত হইতে—আলুলিত দীর্ঘকুন্তলের ভারত হইতে, এই প্রদেশটি কত দূরে!

 রাজপুতানার এই সকল মল্‌মলের ওড়্‌না—যাহার দ্বারা রমণীদের আপাদমস্তক আবৃত—এই সকল ওড়্‌নার কাপড়ে যে নক্সা কাটা আছে, তাহাতে ইচ্ছা করিয়াই যেন একটু বর্বররুচির পরিচয় দেওয়া হইয়াছে; উহাতে যেন কেবল কতকগুলা রঙের ধ্যাবড়া ছোপ্‌—কতকগুলা বেঢপ চক্রাকার রেখা।

 একজন রমণী যে ওড়নাটা পছন্দ করিয়া গায়ে পরিয়াছেন, তাহার রং শ্যাওলা-সবুজ;—তাহার উপর গোলাপীরঙের চক্র কাটা; তাঁহার সঙ্গিনীটি যে ওড়না পরিয়াছেন, উহা সোনালী-রঙের,—তাহার উপর নীলের ছোপ্‌ অথবা Lilacপুষ্প-রঙের ছোপ্‌। ওড়নার কাপড় যেরূপ সূক্ষ্ম ও লঘু, তাহাতে সূর্য্যরশ্মি ও ছায়া ভিতরে প্রবেশ করায়, বেলোয়ারী কাচের সমস্ত আভাই যেন বস্ত্রের উপর খেলাইয়া বেড়াইতেছে। এই সব বিচিত্র কুসুমবর্ণের মধ্যে—প্রাভাতিক বর্ণচ্ছটার মধ্যে—কোন সুন্দরী সাক্ষাৎ নিশাদেবীর ন্যায় দীর্ঘ-রজত-রেখাঙ্কিত কৃষ্ণবর্ণ ওড়না পরিধান করিয়া সকলকে চমকিত করিতেছেন।

 গোয়ালিয়ারের লোকেরা এই রঙের খেলা দেখিতে এতই ভালবাসে যে, একএকটা রাস্তার সমস্তটা জুড়িয়া কেবলি কাপড়-রঙানোই হইতেছে এবং মিলাইয়া-মিলাইয়া তাহার উপর বিচিত্র রঙের ছোপ্‌ দেওয়া হইতেছে।