পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

বাঁধিয়াছে। চূড়ায় উঠিবার সিঁড়ি সবুজ ও ধূসর পক্ষীর পক্ষে সমাকীর্ণ। চূড়াটা খুব উচ্চ; চূড়ার উপর হইতে—“চিকণে”র মত কাজকরা বাড়ী, প্রসাদ, অবসাদ-ম্রিয়মাণ উদ্যান, পাথরের বড়বড়-মন্দিরচুড়াসমেত সমস্ত নগরটাই দৃষ্টিগোচর হয়। মাথার উপর—আকাশে, কাকচিলের ঘোরপাক দিয়া উড়িতেছে। ভারতবর্ষে প্রায়ই যাহা দেখা যায়—নগরের আশপাশ ভগ্নাবশেষে আচ্ছন্ন; পুরাতন গোয়ালিয়ার, পুরাতন বাসস্থান,—দুর্নিবার কালপ্রভাবে, খেয়ালের অবসানে, কিংবা যুদ্ধবিগ্রহের ভাগ্যবিপর্যয়ে পরিত্যক্ত হইয়াছে। যে সময়ে মহাভাগ হিন্দুজাতি বিদেশীয় দাসত্ব স্বীকার করে নাই, স্বাধীনভাবে জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিত, বীরগর্ব্বে গর্ব্বিত ছিল, লড়াক্কা ছিল—সেই বীরযুগের বিরাট্‌ দুর্গসমূহ এ দেশের সর্ব্বত্র যেরূপ দেখিতে পাওয়া যায়, সেইরূপ একটি দুর্গ দিগন্তের একটা কোণ জুড়িয়া রহিয়াছে। ঐ অদূরে, একশত গজের অধিক উচ্চ খাড়া শৈলের উপর, দেড়ক্রোশব্যাপী বপ্রপ্রকার, ঘোরদর্শন প্রাসাদসৌধাবলী, রাজমুকুটের ন্যায় শোভা পাইতেছে।

 পরিশেষে, ভস্মের আভাবিশিষ্ট—পাংশুবর্ণ পত্রের আভাবিশিষ্ট দূর দিগন্ত, গড়াইতে-গড়াইতে কোথায় চলিয়া গিয়াছে। এখনো এই নগরটি নিরুদ্বেগ ও আমোদ-উল্লাসে পূর্ণ; কিন্তু ঐ সব মরা বন, ঐ সব মরা জঙ্গল, যাহা এখান হইতে অস্পষ্ট দেখা যাইতেছে—উহা নগরের উপর একটা যেন বিভীষিকার ছায়া নিক্ষেপ করিয়াছে—আসন্ন দুর্ভিক্ষের সূচনা করিতেছে।

 গত সায়াহ্নে, রাজদরবারের একজন সৌম্যদর্শন পুরুষের সহিত, হাতী চড়িয়া সারা সহরটা ঘুরিয়া আসিলাম। বেলে-পাথরের নগরের নিকট আজ আমার এই শেষ বিদায়। এ সময় ততটা গরম নহে; এই সময়ে রমণীরা রঙীণ ওড়না পরিয়া—রূপালি জরির ওড়না পরিয়া, হাওয়া খাইবার জন্য সুন্দর-কাজ-করা নিজ নিজ গৃহের বারাণ্ডায় বসিয়া আছে।