পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের রাজ্যাভিমুখে।

 এখন সন্ধ্যা। এই সময়ে সূর্যাস্তের পরেই সুস্নিগ্ধ প্রশান্তি ও মধুর শৈত্য কোথা হইতে যেন সহসা আবির্ভূত হয়। কিয়ৎকালের জন্য আমি এই ক্ষুদ্র অনাদৃত পলঙ্কটা-গ্রামে বিশ্রাম করিতেছি। এইখানেই আজ রাত্রিযাপন করিতে হইবে।

 এই দিবাবসানসময়ে, এই তরুতলে, এই নিস্তব্ধতার মধ্যে, আমি আজ সর্ব্বপ্রথমে বাস্তবিকই দূরদেশে আসিয়াছি বলিয়া অনুভব করিতেছি।

 আমি ফ্রান্স হইতে ডাক-জাহাজে করিয়া, হরিৎ-শ্যামল আর্দ্রভূমি সিংহলদ্বীপে প্রথম উপনীত হই। সেইখানে সপ্তাহকাল থাকিয়া, পরে উপকূলগামী একটা জঘন্য জাহাজে উঠিয়া, গতরাত্রে ম্যানার-উপসাগর পার হইয়াছি। সেইখানকার সমুদ্র যেন অষ্টপ্রহর টগবগ করিয়া ফুটিতেছে। তাহার পর, সমস্তদিন শকটে আরোহণ করিয়া, খুব শীঘ্র এই গ্রামে আসিয়া পৌছিয়াছি। ত্রিবঙ্কুরাধিপতি আমার তত্ত্বাবধানের জন্য একটি লোক পাঠাইয়াছিলেন। তিনি আমার জন্য, সুনিবিড় তরুপল্লবের ছায়াতলে একটি ছোট শাদা বাড়ী ঠিক করিয়া রাখিয়াছেন—সেইখানে আমাকে লইয়া গেলেন।

 আগামী কল্য গরুর গাড়ি, করিয়া ত্রিবন্ধুর-রাজ্যের অধিকারভুক্ত একটি প্রদেশে উপনীত হইব। সেইখান হইতে আমার যাত্রা আরম্ভ হইবে। লোকে এই প্রদেশটিকে “খয়রাৎ-মহল”ও বলিয়া থাকে। আমার এই প্রদেশটিকে সুখশান্তির আশ্রম বলিয়া মনে হয়। বর্ত্তমানশতাব্দীসুলভ বিলাসবিভবের সহিত ইহার কোন সম্পর্কই নাই;—পার্শ্ববর্ত্তী প্রদেশসমূহ হইতে একেবারে বিচ্ছিন্ন, লোকবিরল, তাল নারিকেল প্রভৃতি তরুমণ্ডপের ছায়াতলে অবস্থিত।