পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

মনে হয় যেন অগ্নিকুণ্ড হইতে আগুনের কিরণ নিঃসৃত হইতেছে। নিস্তব্ধতা ও উত্তাপে বিহ্বল হইয়া চিল, শকুনি ও কাকের নিদ্রা যাইতেছে।

 ক্রমাগত উপরে উঠিয়া অবশেষে ভীষণদর্শন প্রাসাদসমূহের পাদমূলে আসিয়া উপনীত হইলাম। এই প্রাসাদগুলা একেবারে “খদের” ধারে অধিষ্ঠিত এবং উহাদের দ্বারা পর্ব্বতচূড়ার উচ্চতা যেন আরো বর্দ্ধিত হইয়াছে। ছোট-ছোট-চূড়াসমন্বিত প্রাসাদের মুখভাগটি অতুলনীয়। সমানভাবে বসান প্রস্তরপিণ্ড উপর্য্যুপরি বিন্যস্ত হইয়া বরাবর প্রসারিত এবং বিবিধ-জীবজন্তু-ও-মনুষ্য-আকৃতির অনুকরণে রচিত নীল, সবুজ সোণালি রঙের প্রভূত খচিত-কাজে অলঙ্কৃত। এই সকল উত্তঙ্গ দুর্গম প্রাসাদে গোয়ালিয়ারের ভূতপূর্ব্ব প্রবলপ্রতাপ ভূপতিগণ যোড়শশতাব্দী পর্য্যন্ত বাস করিয়াছেন।

 শেষের একটা প্রকাণ্ড দ্বার—নীলরঙের মিনা-র কাজে আচ্ছাদিত। এখনও মহারাজের সিপাহিরা এখানে পাহারা দেয়; এই দ্বার দিয়া একটা চূড়ার উপরিস্থ ময়দানে উপনীত হইলাম। এই ময়দানটি প্রায় দেড়মাইল দীর্ঘ; উহার সমস্তটাই দুর্গবপ্রে পরিবেষ্টিত। সমস্ত পশ্চিমভারতের মধ্যে ইহা সর্ব্বাপেক্ষা অনধিগম্য বলিয়া প্রসিদ্ধ। ঐতিহাসিক যুগ হইতে যোদ্ধৃ রাজামাত্রেই এই স্থানটিকে আকাঙ্ক্ষার সামগ্রী বলিয়া মনে করিয়া আসিয়াছেন—এই স্থানটি কত লোমহর্ষণ যুদ্ধবিগ্রহ দেখিয়াছে,যাহার বর্ণনায় রাশিরাশি গ্রন্থ পূর্ণ হইতে পারে। এই উত্তুঙ্গ বিজনভূমি,—সৌধ প্রাসাদে, সমাধিমন্দিরে, দেবালয়ে, সকল সভ্যতাস্তরের— সকল যুগের পুত্তলিকাসমূহে সমাচ্ছন্ন। য়ুরোপের এমন কোন স্থান নাই, যাহার সহিত ইহার তুলনা হইতে পারে; বিলুপ্ত পুরাতন বৈভবাদির শোকোদ্দীপক ‘জাদুঘর’ ইহার মত আর নাই।

 মিনা-র কাজকরা প্রথম প্রাসাদের সম্মুখে হাতী হাঁটু গাড়িয়া বসিল; আমরা নামিয়া প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করিলাম। এই প্রাসাদটি