পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর।
২৮১

ততটা ঘোরতর “সেকেলে” ধরণের নহে—এবং ততটা ভগ্নদশাপন্নও নহে।

 ইহা হদ্দ পাঁচশত বৎসরের; কিন্তু ইহার বিরাট্‌ পত্তনভিত্তি সেই সব পালরাজাদের আমলের—যাঁহারা তৃতীয় শতাব্দী হইতে দশম শতাব্দী পর্যন্ত গোয়ালিয়ারে রাজত্ব করিয়াছিলেন। বড় বড় পাথরের মঞ্চের উপর কতকগুলা ঘোরদর্শন নীচু দালান সংস্থাপিত। ধ্বংসাবশেষের নিস্তব্ধতা, হঠাৎ অৰ্দ্ধচ্ছায়ান্ধকার এবং আমরা যে জলন্ত বহির্দ্দেশ হইতে আসিতেছি আমাদের নিকট হঠাৎ একটু শৈত্যের আবির্ভাব হইল। আগেকার বিলাস- বৈভবের মধ্যে, এখন কেবল রাশিরাশি খোদাই-কাজ এবং দেয়ালে চমৎকাব মিনা-র কাজ অবশিষ্ট রহিয়াছে; এই সমস্ত ডানাওয়ালা পশু, অদ্ভুত বিহঙ্গ, সবুজ ও-নীল পক্ষবিশিষ্ট ময়ূর প্রভৃতির প্রতিকৃতি। ময়ূরের পাখায় যেরূপ দুরপনেয় উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটা দেখা যায়—সে বর্ণবিন্যাসের গুহ্যকলা এখন বিলুপ্ত হইয়াছে। দেয়ালের গাঁথুনির মধ্যে, ছোট-ছোট- ছিদ্র-করা একএকটা প্রস্তরফলক বসানো রহিয়াছে—বহির্জগতের দৃশ্য তাহার মধ্য হইতেই যাহা-কিছু দেখা যায়। এইরূপ গবাক্ষের নিকটে বসিয়াই তখনকার বন্দীকৃত সুন্দরীরা আপন-আপন কল্পনায় বিভোর হইত এবং রাজারা -আকাশের মেঘ, দূর দিগন্তদেশ, সৈন্যবাহিনী ও যুদ্ধাদি নিরীক্ষণ করিতেন।

 “খদ”প্রান্তবর্ত্তী প্রাসাদসমূহের সমস্ত মুখভাগ—যাহা উচ্চতায় প্রায় একশত ফিট্‌ ও দৈর্ঘ্যে প্রায় তিনশত ফিট্‌-সুরঙ্গগৃহের মত অষ্টে-পৃষ্ঠে বদ্ধ সমস্ত দালান, সমস্ত কক্ষ,—শুধু এই সকল সচ্ছিদ্র প্রস্তরফলকের মধ্য দিয়াই বায়ুগ্রহণ করে; কি পলায়ন, কি আত্মহত্যা, কি প্রেমের ব্যাপার, কোন কারণেই এই সকল প্রস্তরফলক খুলিতে পারা যায় না। আমাদের কারাগারের লৌহগরাদে অপেক্ষাও ইহা দারুণ কঠোর। সানের নীচে সর্ব্বত্রই,—সুরঙ্গপথে নামিবার জন্য গুপ্তসোপান, সুরঙ্গ ও