পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাদ্রাজে থিওসফিষ্টদের গৃহে।
২৮৫

বাহ্যচিহ্নের এই চিত্রগুলি যেন একটা জাদুঘরে একত্র সংরক্ষিত হইয়াছে;—খৃষ্টের ক্রুস, সলোমনের মোহর, জিহোবার ত্রিকোণ, শাক্যমুনির পদ্ম, মহাদেবের ত্রিশূল, মিশরদেশীয় আইসিস্‌দেবের চিহ্নাবলী। ইহা মাদ্রাজস্থ থিওসফিষ্টদিগের গৃহ। আমি থিওসফিষ্টদিগের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য্য কথা শুনিয়াছিলাম। যদিও আমি সে-সব কথায় বিশ্বাস করি নাই, তবু মনে করিলাম,—দেখি না কেন, উহাদের নিকটে যদি কোন আশার কথা শুনিতে পাই। এই আমার শেষ চেষ্টা। কিন্তু উঁহারা আমাকে কি দিতে চাহিলেন, শোনোঃ—বৌদ্ধধর্ম্মের সেই সুবিদিত হৃদয়হীন উদাসীনভাবের কথা,—“আমার নিজের জ্ঞানলোক!”

 —“প্রার্থনা?” তাহারা বলিলেন—“প্রার্থনা শুনিবে কে?…মানুষের দায়িত্ব মানুষের নিজের কাজেই। মনুবচন স্মরণ করিয়া দেখ,—‘মনুষ্য একাই জন্মগ্রহণ করে, একাই জীবিত থাকে, একাই মৃত হয়, কেবল ধর্ম্মই তাহার অনুগমন করে’...তবে প্রার্থনা শুনিবে কে? কাহার নিকট প্রার্থনা করিবে, তুমি যখন নিজেই ঈশ্বর? তোমার আপনার নিকটেই প্রার্থনা করিতে হইবে—তোমার নিজ কর্ম্মের দ্বারা।”

 আমাদের মধ্যে একটা গভীর নিস্তব্ধতা আসিয়া পড়িল; এরূপ বিষাদময় নিস্তব্ধতা আমার জীবনে কখন দেখি নাই। সব নিস্তব্ধ—কেবল শূন্য আকাশে এক একটি করিয়া পাতা ঝরিয়া পড়িতেছে, তাহারই অস্পষ্ট মৃদু শব্দ শুনা যাইতেছে; মনে হইল,—যাঁহাদের সহিত আমার কথাবার্ত্তা হইতেছিল, তাঁহাদের নিশ্বাসবায়ুতে আমার মনের মধুর ও অস্পষ্ট বিশ্বাসগুলি যেন একে-একে ঝরিয়া পড়িতেছে। কিন্তু তাঁহারা স্বকীয় যুক্তিবিচারে অটল,—স্বকীয় সিদ্ধান্তে বেশ সন্তুষ্ট।

 যে দুইটি লোকের সহিত আমার কথা হইতেছিল, দুজনেই বেশ এদিকে আতিথেয়, সহৃদয় ও আদর-অভ্যর্থনায় সুপটু। প্রথমটি য়ুরোপীয়,—আমাদিগের নানাপ্রকার আন্দোলন ও অনিশ্চিততায় শ্রান্তক্লান্ত হইয়া ইনি