পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাদ্রাজে থিওসফিষ্টদের গৃহে।
২৮৯

কি করিবে? খৃষ্টানদিগের যাহা ধ্যানের বিষয়, আমি সেইরূপ অমরত্ব চাই;—আমি চাই আমার আমিত্ব, আমার নিজত্ব, আমার বিশেষত্বটুকু বরাবর থাকিয়া যাইবে; আমি যাহাদের ভালবাসিতাম, তাহাদিগকে আবার আমি দেখিতে পাইব—পূর্ব্বের মতই তাহাদিগকে ভালবাসিব, তাহা না হইলে আর কি হইল?

 আমি যখন আবার নগরের পথ ধরিয়া চলিতে লাগিলাম, তখন কাকেরা মহা-কোলাহল আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। সকলে মিলিয়া মৃত্যুর গান গাহিতেছে; এই সময়ে নিদ্রা যাইবার জন্য তাহারা দলে-দলে বৃক্ষশাখায় বসিয়া গিয়াছে। বরাবর সমস্ত পথটায়, বট ও তালবৃক্ষের তলদেশে, গজমুণ্ডধারী গণেশের ছোট-ছোট মূর্ত্তি সন্ধ্যালোকে দেখা যাইতেছে। যে সকল লোকের নিকট হইতে আমি চলিয়া আসিলাম, তাহাদের মতবাদটি এই সকল বিগ্রহেরই ন্যায় নিতান্ত শিশুজনোচিত ও অকিঞ্চিৎকর।

 সন্ধ্যার সময়, ঐ সকল থিওসফিষ্টদিগের নিকট আমার অসম্মতিসূচক পত্র পাঠাইলাম। তাঁহাদিগকে ধন্যবাদ জানাইলাম, আর বলিলাম, “আমি যত শীঘ্র পারি, মাদ্রাজ ছাড়িব বলিয়া স্থির করিয়াছি; তাই শেষবিদায় লইবার জন্য কাল আমি তাঁহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিব।”

 যাহাদিগকে আমি খুব ভালবাসিতাম, রাত্রির স্বপ্নে আমার সেই সব মৃত প্রিয়জনদিগকে আমি পুনর্ব্বার দর্শন করিলাম; আমার শৈশবের সেই পুরাতন বিকৃতভাবাপন্ন অশুভদর্শন বাসভবনের মধ্যে সেই পাণ্ডুবর্ণ গলিত মূর্ত্তিগুলি দেখিলাম। আর এক রাত্রি,—যেরূপ জেরুস্যালেমে আমার ঘটিয়াছিল—যে সময়ে আমার প্রথমকালের বিশ্বাসগুলি চিরকালের মত ভাঙিয়া যায়—সেই রাত্রির মত আজও সমস্ত রাত্রি অশেষপ্রকার বিষাদের চিন্তা, দুর্নিবার ভয়ের চিন্তা, একটার পর একটা, মনোমধ্যে ক্রমাগত উদয় হইতে লাগিল; তাহার পর যেই প্রভাত হইল, অম্‌নি একটা