পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোধূলি-আলোকে জগন্নাথমন্দির।
২৯৩

উচ্চ। গঙ্গামোহানার অন্বেষণে, জাহাজগুলা যখন বহিঃসমুদ্র দিয়া চলিতে থাকে, তখন এই মন্দিরটি তাহাদের নজরে পড়ে; এবং সামুদ্রিক নকসায়, দিগ্‌দর্শনের চিহ্নরূপে ইহা অঙ্কিত রহিয়াছে। কিন্তু এই স্থানের উপকূলে নোঙর ফেলিবার সুবিধা নাই; সুতরাং নাবিকগণ, দূর দিগন্তপটে অঙ্কিত একটি চিত্র ভিন্ন, এই পুরাতন মন্দিরসম্বন্ধে আর কিছুই অবগত নহে।

 একটা চওড়া ও সোজা রাস্তা মন্দির পর্য্যন্ত গিয়াছে। যে সময়ে আমি পৌঁছিলাম, রাস্তাটা লোকে লোকাকীর্ণ। কিন্তু এখানকার ভারত যেন একটু বন্যভাবাপন্ন;—বিদেশীকে দেখিলে এখনো যেন বিস্মিত হয়; বিদেশীকে দেখিবার জন্য পথপরিবর্ত্তন করে, শিশুরা পিছনে-পিছনে চলিতে থাকে। নগ্ন লোকগুলা, সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে একটু কালো হইয়া গিয়াছে; মল্‌মল্‌-ওড়নায় আচ্ছাদিত রমণীগণের পায়ে এত অধিক মল্‌-নূপুর যে, তাহার ভারে তাহাদের গমন মন্থর হইয়া পড়িয়াছে; হস্তের প্রকোষ্ঠ হইতে স্কন্ধ পর্য্যন্ত এত অধিক বলয়-বাজুবন্ধ যে, দেখিলে মনে হয়, যেন তাহাদের সমস্ত হাত আগাগোড়া একটা রৌপ্য কিংবা তাম্রকোষের মধ্যে আবদ্ধ। এখানকার কোন ক্ষুদ্র গৃহই রঙের চিত্রে একেবারে আচ্ছন্ন নহে; গৃহের চুনকাম-করা শুধু মুখভাগের উপর দেবদেবীর মূর্ত্তি অঙ্কিত; কাহারও দেহ নীল, কাহারও দেহ লাল, কাহারও মুখে নিষ্ঠুরভাব—এইরূপ সারি-সারি বরাবর চলিয়াছে; Thebes কিংবা Memphis—নগরের “ফ্রেসকো” চিত্রে যেরূপ মূর্ত্তিগুলি সজ্জিত, ইহা কতকটা সেই ধরণের। তা ছাড়া, গৃহের গঠনরীতি মিশরকে স্মরণ করাইয়া দেয়—সেইরূপ অনুচ্চ ও স্থূল ধরণের, সেইরূপ পোস্তার গাঁথুনি, সেইরূপ থাম, সেইরূপ গুরুভার দেয়াল—যাহা ভারাতিশয্যে পশ্চাতে ঝুঁকিয়া রহিয়াছে।

 মন্দিরটি একটি বিশাল ভীষণ দুর্গবিশেষ; চতুষ্পার্শে উচ্চ দস্তুর