পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

চতুষ্কোণ প্রাকার; প্রত্যেক পার্শ্বের মধ্যস্থলে একএকটি দ্বার। যে রাস্তা দিয়া আমরা এখন পদব্রজে চলিতেছি, মন্দিরের প্রধান দ্বারটি সেই রাস্তার ঠিক সোজাসুজি। দ্বারের দুই পার্শ্বে দুইটা প্রকাণ্ড প্রস্তরময় পশুমূর্ত্তি; পশুর চোখদুটা গোলাকার, নাক থ্যাবড়া ও মুখের ‘হাঁ’ ভীষণ। এই দুই পশুমূর্ত্তির মাঝখান দিয়া একটি বৃহৎ শুভ্র সোপান মন্দিরের উপর উঠিয়াছে; সোপানের ধাপগুলা শ্যামবর্ণ নগ্নকায় লোকদিগের যাতায়াতে ভারাক্রান্ত।

 বলা বাহুল্য, এই মন্দিরে আমার প্রবেশাধিকার নাই। মন্দিরের সম্মুখস্থ সানের উপর যেই আমি ধৃষ্টতাসহকারে পদার্পণ করিয়াছি, অম্‌নি কতকগুলি পুরোহিত আমাকে একটু পিছনে হটিয়া যাইতে—একটু দূরে গিয়া সেই বালির উপর দাঁড়াইতে অনুনয় করিল—যাহার উপর সকলেরই অধিকার আছে;—সমুদ্রের সেই বেলাভূমি,—সমুদ্রের সেই বালুকারাশি, যাহাতে করিয়া জগন্নাথপুরীর সমস্ত রাস্তা তুলাভরা গদির মত ‘থস্‌থসে’ বলিয়া মনে হয়।

 কিন্তু এই চতুষ্কোণ ভীষণ প্রাকারটি লঙ্ঘন করিয়া ভিতরে যাইতে না পারিলেও উহা প্রদক্ষিণ করিবার আমার অধিকার আছে। ঐ প্রাকারের প্রত্যেক দিকে বরাবর একএকটা বীথি চলিয়া গিয়াছে; তাহার দুই ধারে শুষ্ক মৃত্তিকানির্ম্মিত গৃহাবলী। এই পুরাতন গৃহগুলা গুরুভার ঘনপিণ্ডাকৃতি; উহার দেয়াল ভিতর-দিকে ঝোঁকা; গৃহের মুখভাগের উপর সারি-সারি দেবদানবের প্রতিকৃতি প্রায়ই নীল ও লাল রঙে চিত্রিত, তাহার শিখরদেশে যে বারণ্ডা স্থাপিত—সেই বারণ্ডা পর্য্যন্ত একটা ক্ষয়গ্রস্ত সিঁড়ি উঠিয়াছে। এই সময়ে সায়াহ্নের শৈত্য-মাধুর্য্য উপভোগ করিবার জন্য রজতবলয়বিভূষিতা হিন্দুরমণীগণ ঐ বারণ্ডায় বসিয়া সমস্ত নিরীক্ষণ করিতেছে, অথবা আপন-আপন ভাবে ভোর হইয়া রহিয়াছে। ওড়নার

 ভাঁজের মধ্য হইতে তাহাদিগকে বড়ই সুন্দর দেখাইতেছে।

 যে সময়ে আমি মন্দির প্রদক্ষিণ করিতেছি, কতকগুলি ক্ষুদ্র বালিকা