যেন উহা অন্য গ্রহনিবাসী কিংবা চন্দ্রনিবাসী লোক কর্ত্তক নির্ম্মিত হইয়াছে। উহা বিহঙ্গকুলের আবাসস্থান। ইহারই মধ্যে উহারা সান্ধ্যভ্রমণে বহির্গত হইয়া আকাশে অবাধে ঘোরপাক্ দিতেছে।
আমি ও এই ক্ষুদ্র বালিকাগুলি—আমরা এই নিষিদ্ধ ঘেরের তৃতীয় দিকে আসিয়া পৌঁছিলাম! চতুষ্পার্শ্বের গৃহছাদ সুন্দরী রমণীগণকর্ত্তৃক বিভূষিত হইয়াছে; রাস্তার উপর বাজার বসিয়াছে; বাজারে রং-করা মল্মল্ বস্ত্র, শস্যদানা, ফলফুল বিক্রয় হইতেছে!
আমরা নীচে রহিয়াছি—আমাদের নিকট সূর্য্য অস্তমিত; কিন্তু বৃহৎ মন্দিরচূড়াটি সূর্য্যকে এখনো দেখিতে পাইতেছে;—উহার সমস্ত অংশই গোলাপী আভায় উদ্ভাসিত।
মনে হইল, পবিত্র বানরদিগের সান্ধ্যভ্রমণের ঠিক এই সময়। উহাদের মধ্যে প্রথমটি পবিত্র প্রাচীরের উপরে আসিয়া উপস্থিত হইল, এবং প্রাচীরের একটি দস্তুর অংশের উপর উঠিয়া-বসিয়া গা চুল্কাইতে লাগিল। প্রাচীরের শিখরদেশে দেবদানবের ছোট-ছোট মূর্ত্তি ইতস্তত খোদিত রহিয়াছে; বানরটা যদি না নড়িত, তাহা হইলে উহাকে উহাদেরই একটি বলিয়া মনে হইত, সন্দেহ নাই। তাহার পর, আর একটা বানর বাহির হইয়া পাশ্ববর্ত্তী অন্য এক দস্তুর-অংশের অগ্রভাগে আসিয়া বসিল; এইরূপে তিনটা, পরে চারিটা বানর আসিয়া বসিল; প্রাকারের দস্তুরাংশগুলি কপিবৃন্দে বিভূষিত হইল।
অতি শীঘ্রই বেলা পড়িয়া আসিল; ধূসর ও পুরাতন মন্দিরের শুধু চূড়ার অগ্রভাগটি গোলাপী-আভায় রঞ্জিত হইয়া রহিল। প্রাচীরের উপর,—প্রস্তরবর্ণের বানর, বানরবর্ণের ছোট-ছোট খোদিত প্রস্তরমূর্ত্তি ও শকুনিবৃন্দ। আকাশে—কাক ও পায়রার ঝাঁক্ বৃহৎ চক্রাকারে পাক্ দিতে দিতে, ক্রমে তাহাদের কক্ষপথ সঙ্কীর্ণ করিয়া আনিয়া, চূড়াশিখরস্থ পিত্তলবিম্বের চারিধারে ঘুরিতে আরম্ভ করিল।