পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

অভ্যন্তরপ্রদেশে না জানি কি কাণ্ড হইতেছে! না জানি কোন্ প্রতিমা (অবশ্যই খুব ভীষণ) এক্ষণে সান্ধ্যপূজা গ্রহণ করিতেছে। মন্দিরেরই মত লোকদিগের যে অন্তরাত্মা আমার নিকট দুরধিগম্য, তাহা হইতে না জানি কিরূপ আকারে প্রার্থনা উত্থিত হইতেছে!…

 সে যাই হোক,—একটা বানর ভ্রমণে পরাঙ্মুখ হইয়া, নিম্নে লেজ ঝুলাইয়া, বহির্লোকের দিকে পিঠ ফিরাইয়া, মন্দিরপ্রাকারের শিখরদেশে একাকী বসিয়া আছে; এবং ঐ ঊর্দ্ধে, মন্দিরচূড়ার উপরে, দিবসের মুমূর্ষু, দশা বিষন্নভাবে নিরীক্ষণ করিতেছে। যে সকল পায়রা ও কাক আকাশে ঘোরপাক্‌ দিতেছিল, এক্ষণে উহারা ঘুমাইবার জন্য মন্দিরচূড়ায় আশ্রয় লইয়াছে। ঐ প্রকাণ্ড চূড়াটার সমস্ত শিরাজাল, সমস্ত খোঁচ্‌খাঁচ্‌ এক্ষণে ঐ সকল পক্ষীর সমাগমে কালো হইয়া গিয়াছে; পাখীরা এখনো পাখার ঝাপ্টা দিতেছে। শুধু ছায়ারেখা ছাড়া বানরটার আর-কিছুই এখন আমি দেখিতে পাইতেছি না। তাহার পৃষ্ঠদেশ প্রায় মানুষেরই মত, তাহার ক্ষুদ্র মস্তক চিন্তামগ্ন; প্রকাণ্ড মন্দিরচূড়ার ঈষৎ-গোলাপী-মিশ্রিত পাণ্ডুবর্ণ ‘জমি’র উপর, বানরের পৃথক্‌ দুইটা কান পরিস্ফুটভাবে প্রকাশ পাইতেছে!…

 আবার যেন সেই নিঃশব্দ পাখার বাতাস আমি অনুভব করিলাম; বাদুড়টা যে কক্ষপথে ঘুরিতেছিল, তাহার কোন পরিবর্ত্তন না করিয়া এখনো সেই পথে যাতায়াত করিতেছে।

 বানরটা বৃহৎ মন্দিরচূড়া দেখিতেছে; আমি বানরটাকে দেখিতেছি; সেই ছোট মেয়েগুলি আমাকে দেখিতেছে, এবং আমাদের সকলেরই মধ্যে দুর্ব্বোধ্যতার একটা বিশাল খাত প্রসারিত রহিয়াছে।…

 এক্ষণে আমি মন্দিরের মুখ্য প্রবেশদ্বারের নিকটস্থ সেই সৈকতভূমিতে আসিয়াছি যেখানে জগন্নাথপুরীর সর্ব্বাপেক্ষা লম্বা রাস্তাটা আসিয়া মিলিত হইয়াছে। তীর্থযাত্রীরা আসিতেছে বলিয়া খবর হইয়াছে; তাহারা প্রায়