প্রবেশ করিল, বিকারগ্রস্তের ন্যায় উন্মত্ত হইয়া সিঁড়ির উপর উঠিতে লাগিল, এবং অবারিতদ্বার মন্দিরের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হইয়া গেল।
এখন রাত্রি হইয়াছে, পান্থশালার অন্বেষণে আমি চলিলাম। ভারতীয়, নগরমাত্রেই দেখা যায়, এই পান্থশালাগুলি প্রায়ই সহর হইতে দূরে—সহরের বাহিরে অবস্থিত।
সৈকতময় একটি ক্ষুদ্র নির্জ্জনস্থানে একটা পান্থশালা পাইলাম। স্বচ্ছ সুন্দর মধুময় রাত্রি। সমুদ্রের দোলনশব্দ শুনা যাইতেছে; সমুদ্র-উপকূলমাত্রেই এইরূপ শব্দ শোনা যায়। জগন্নাথের মন্দির কিংবা মন্দিরের সেই অপূর্ব্ব চূড়া আর দেখা যাইতেছে না; ঐ হোথায় নীলাভ ছায়ার মধ্যে সমস্তই ডুবিয়া গিয়াছে। এখানকার সামুদ্রিক গন্ধ, বালির উপর যে সকল ছোট-ছোট বুনো গাছের চারা যেন গালিচা বিছাইয়া রাখিয়াছে, সেই সকল চারা-সমুত্থিত সৌরভ,—অতীব বিষন্নভাবে আমার শৈশবে রজন্মস্থানকে স্মরণ করাইয়া দিতেছে; বঙ্গোপসাগরের ধারে, আমার সেই (Ile d' Oleron) ওল্রোঁ-দ্বীপের সাগরতটকে স্মরণ করাইয়া দিতেছে।…
একমাত্র তাহারাই ভ্রমণের সমস্ত মাধুর্য্য, সমস্ত কঠোরতা অনুভব করিতে পারে, যাহাদের অন্তরের অন্তস্তলে স্বকায় জন্মস্থানের প্রতি একটা দুর্ব্বিজয় আসক্তি বিদ্যমান।
আমাদের দেশের ন্যায় ভারতবর্ষেও, রেলের ডাক-গাড়ি আজ আকাশকে যেন দগ্ধ করিয়া চলিয়াছে। জগন্নাথ হইতে—বঙ্গোপসাগরের প্রান্তদেশ হইতে ছাড়িয়া, উত্তরাঞ্চলের সেই একঘেয়ে সমতলভূমি অতিক্রম করিয়া, বারাণসী ছাড়াইয়া, (যাহার জন্য আমার মন চঞ্চল হইয়া, রহিয়াছে, এবং যেখানে আবার আমাকে পিছাইয়া আসিতে হইবে।)