পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

পাল্কির মধ্যে বদ্ধ; তাহার পশ্চাতে একদল ভৃত্য—দানসামগ্রীতে পূর্ণ সোনার গিল্টি-করা কতকগুলা ক্ষুদ্র সিন্দুক মাথায় করিয়া চলিয়াছে। সর্ব্বশেষে, জরির আস্তরণে ঢাকা বরের খাট চারিজনের স্কন্ধে মহা-আড়ম্বরসহকারে চলিয়াছে।

 অতি-উচ্চ অতি-পুরাতন গৃহের শীর্ষদেশ হইতে বারাণ্ডা ও ‘হাওয়াখানা’-ঘর বাহির হইয়াছে; নীচের কুট্টিমভূমির উপর নানাপ্রকার জিনিষের বিক্রেতাগণ উপবিষ্ট, সেখানে রাশিরাশি রেশমী কাপড় ও চুম্‌কি ঝিক্‌মিক্‌ করিতেছে; প্রথম-তলায়, নর্ত্তকী ও বারাঙ্গনাগণ মুক্ত গবাক্ষের ধারে বসিয়া আছে; উহাদের কালো চোখের মদালস দৃষ্টি বেশ স্পষ্ট দেখা যাইতেছে; উপরে কতকগুলি লোক রহিয়াছে; ঘরের দ্বার রুদ্ধ; ছাদের উপর বড় বড় শকুনি অষ্টপ্রহর বসিয়া আছে; কিংবা কতকগুলা বানর সপরিবারে বসিয়া, লেজ ঝুলাইয়া, লোকের গমনাগমন নিরীক্ষণ করিতেছে ও চিন্তায় মগ্ন রহিয়াছে—বানরেরা বহুশতাব্দী হইতে আগ্রা দখল করিয়া বসিয়াছে; উহারা টিয়াপাখীদের মত ছাদের উপর মুক্তভাবে অবস্থিতি করে; ধ্বংসদশাপন্ন কোন কোন অঞ্চল, প্রায় উহাদের নিমিত্তই ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে; সেখানে উহারা বাগান-বাগিচা লুণ্ঠন করিয়া, চতুষ্পার্শ্বস্থ হাটবাজার লুণ্ঠন করিয়া, নির্ব্বিবাদে রাজত্ব করে।

 এই আগ্রার প্রাসাদটিকে দূর হইতে দেখিলে মনে হয় যেন একটা পর্ব্বত,—ধূসর-লোহিত প্রস্তরপিণ্ডে নির্ম্মিত এবং প্রাকারস্থ ভীষণ দস্তুর চূড়াগুলির দ্বারা কণ্টকিত।

 যখন কারাগারসদৃশ গুরুপিণ্ডাকার রক্তবর্ণ এই প্রাকারাবলী নিরীক্ষণ করি, তখন মনে এই প্রশ্নটি স্বতই উপস্থিত হয়,—এই সকল বিলাসী বাদশারা, কেমন করিয়া এই প্রাকারবেষ্টিত স্থানটিকে স্বকীয় খাম্‌খেয়ালী বিলাসবিভবের লীলাক্ষেত্ররূপে নির্ব্বাচন করিয়াছিলেন। সে যাই হোক্‌—নদীর পাশ দিয়া—জুম্মামস্‌জিদের পাশ দিয়া এই লোহিত পর্ব্বতটিকে