পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

হয় নাই। ঐ সকল চতুষ্কমণ্ডপের উপর হইতে সুন্দরীরা নিম্নস্থ উৎসবআমোদ নিরীক্ষণ করিতেন; তাঁহাদের চিত্তবিনোদনার্থ যে বাঘের লড়াই ও হাতীর লড়াই হইত, তাহাই তাঁহারা অবলোকন করিতেন; কিন্তু এখন সেই ক্রীড়াভূমি কণ্টকগুল্মে আচ্ছন্ন, বৃক্ষলতায় আচ্ছন্ন; অনাবৃষ্টির শুষ্কতায়, এই সব বৃক্ষলতা এক্ষণে পল্লববিরহিত; এই সায়াহ্নে গ্রীষ্মের জ্বলন্ত উত্তাপ যদি না থাকিত, তাহা হইলে শীতঋতুর আবির্ভাব হইয়াছে বলিয়া সহজেই মনে হইত।

 এখানে পাখীতে-পাখীতে একেবারে আচ্ছন্ন; এত পাখী ভারতের আর কোন প্রদেশে নাই। পাখীর কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কোন শব্দই এখন আমার কানে আসিতেছে না। এই সব গৃহছাদের নিস্তব্ধতা উহাদেরই চীৎকারে ভরপূর; এই সব শব্দযোনি ধবল মার্ব্বেল উহাদেরই চীৎকারে প্রতিধ্বনিত। সন্ধ্যা নিকটবর্ত্তী হইলে, পক্ষীদের মধ্যে স্থাননির্ব্বাচনের মহাধুম পড়িয়া যায়। আমার নিম্নস্থ ঐ গাছটি কাকে-কাকে ভরিয়া একেবারে কালো হইয়া যাইতেছে; আর একটি গাছ টিয়াপাখীতে আচ্ছন্ন;—মরাগাছের ডালের উপর যেন কতকগুল সবুজ পাতা গজাইয়া উঠিয়াছে। ধবলকায় চিল, বড়-বড় ‘ন্যাড়া’ শকুনি, চতুষ্পদ পশুদের মত ভূমির উপর বিচরণ করিতেছে।

 দূবস্থ সমভূমির উপর ছোট ছোট ধবল গম্বুজ দেখা যাইতেছে; কোন চিত্রই, কোন বস্তুই, মার্ব্বেলের এই স্বচ্ছ ধবলতার অনুকরণ করিতে পারে না। যে ধূলার কুজ্ঝটিকায় সমস্ত ভূমি আচ্ছন্ন এবং যাহা সন্ধ্যাগমে নীল বর্ণ অথবা ইন্দ্রধনুর বিচিত্রবর্ণ ধারণ করে, সেই কুজ্ঝটিকার মধ্য হইতে,—স্থানে-স্থানে এই স্বচ্ছ ধবলতা ফুটিয়া বাহির হইতেছে। পূর্ব্বে ঐ সব উচ্চ প্রাসাদ বেগমদিগের নিবাসগৃহ ছিল; জরির পাড়ওয়ালা ওড়না পরিয়া, মণিরত্নে বিভূষিত হইয়া, সুন্দর বক্ষোদেশ অনাবৃত করিয়া ঐ সব সুন্দরী ঐখানে বিচরণ করিত। ঐ সব গম্বুজের মধ্যে তাজের গম্বুজটাই