পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

পরিমাণে-গঠিত; এবং এরূপ প্রস্তরে নির্ম্মিত, যাহাতে লেশমাত্র দাগ নাই—ধূসর-পাণ্ডু রঙের একটি শিরাও নাই।

 তাহার পর, নিকটে গিয়া দেখা যায়, অতি সুকুমার-ধরণের লতাপাতার কাজ দেয়াল বাহিয়া উঠিয়াছে, কার্ণিসের ধার দিয়া গিয়াছে, দ্বারের চারিধার ঘিরিয়া আছে; ‘মিনারেটের’ উপর গড়াইয়া চলিয়াছে; খুব সরু সরু কালো মার্ব্বেলের টুক্‌রা বসাইয়া এই সব লতাপাতা রচিত হইয়াছে। যে গম্বুজটি সুলতানার অন্তিমশয্যাকে আবৃত করিয়া রাখিয়াছে, সেই ৭৫-ফীট‌্-উচ্চ মধ্য গম্বুজের নিম্নস্থ স্থানটিতে সহজ সরলতার আতিশয্য,—ধবল-মহিমার পরাকাষ্ঠা পরিলক্ষিত হয়। আশ্চর্য্য! যেখানে অন্ধকার হইবার কথা, সেখানেও আলোক; যেন ধবলতার সমস্ত কিরণ একস্থানে পুঞ্জীভূত হইয়াছে; মার্ব্বেলের এই মহা-আকাশে কি-জানি কেমন-একটা অপূর্ব্ব অস্ফুট স্বচ্ছতা বিদ্যমান। ধূসর-মুক্তাবর্ণ শিরাজালে ঈষৎ লাঞ্ছিত উচ্চ দেয়ালের গায়ে আর কিছুই নাই; কেবল ছোট-ঘোট কতকগুলা দস্তুর খিলান এমন বেমালুমভাবে বাহির হইয়াছে। যে, উহাদিগকে রেখাচিত্র বলিয়া মনে হয়। বিশাল গম্বুজের ভিতর-পিঠে আর কিছুই নাই—কেবল জ্যামিতিক-রেখায় বিন্যস্ত খুদিয়া-বাহির করা বহুল খুব্‌রি-কাটা ঘর। কেবল তলদেশে,—এই সব সুন্দর দেয়ালের চারিধারে পদ্মফুলের যেন একটা কেয়ারী রচিত হইয়াছে; যেন উহার বৃন্তগুলা ভূমি হইতে উঠিয়াছে এবং উহার খুদিয়া-বাহির করা পাপ্‌ড়িগুলা ঝরিয়া পড়িতেছে.. আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্পকলা ন্যূনাধিকপরিমাণে এই ভূষণের অনুকরণ করিয়াছে, কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে এইপ্রকার সৌধ-অলঙ্কার খুবই প্রচলিত ছিল।

 সমস্ত আশ্চর্য্য পদার্থের মধ্যে আশ্চর্য্যতম পদার্থ সেই ধবল পাথরের ‘গরাদে’, যাহা স্বচ্ছ দালানের মধ্যস্থলে সমাধিপ্রস্তরটিকে বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে; এ সমস্ত কতকগুলি ‘খাড়া’ মার্ব্বেল-ফলক; উহাতে এত সূক্ষ্ম