পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগলবিভবের ধবল প্রভা
৩১১

জালি-কাটা কাজ যে, মনে হয়, যেন গজদন্ত-ফলকে ফোঁড় কাটা; উহার চারিধারে সেই ছোট-ছোট ফুলের মালার পাড়; Lapis, ফিরোজা, পদ্মরাগ, porphyre প্রভৃতি মণি বসাইয়া এই সকল ফুল রচিত হইয়াছে।

 এই ধবল গম্বুজটির শব্দযোনিতা এত অধিক যে, মনে একটু ভয়ের সঞ্চার হয়;—উহার প্রতিধ্বনি যেন আর থামে না। যদি কেহ ‘আল্লা’র নাম উচ্চারণ করে, তাহার সেই অতিবর্দ্ধিত কণ্ঠস্বর কয়েক সেকেণ্ড পর্য্যন্ত স্থায়ী হয় এবং ‘অর্গ্যানে’র আওয়াজের মত আকাশে উহার রেশ চলিতে থাকে—যেন আর শেষ হয় না।

 ৯০মাইল আরো উত্তরে, দিল্লীনগরের ভীষণ প্রাকারের পশ্চাদ্ভাগে, মোগল বাদ্‌শাদিগের আর একটি প্রাসাদ; উহা বিভবমহিমায় আগ্রার প্রাসাদকেও অতিক্রম করে।

 বড়-বড়-ছুঁচাল-খিলান-সমন্বিত দিল্লির এই প্রাসাদটি একটা অদৃশ্য পুরাতন উদ্যানের মধ্যে অধিষ্ঠিত; চারিদিক্‌ রুদ্ধ; উহার দস্তুর অত্যুচ্চ প্রাকারাবলী দর্শকের মনে বিষাদময় ঘোর কারাগারের ভাব আনিয়া দেয়।

 কিন্তু উহা যে-সে কারাগার নহে—উহা দৈত্যদানবের কিংবা পরীদিগের কারাগার; সুকুমার শিল্পগরিমায় কোন মানবপ্রাসাদ উহার সমকক্ষ হইতে পারে না। বলা বাহুল্য, উহারও সমস্তই ধবল মার্ব্বেল নির্ম্মিত; সমস্তই খুদিয়া বাহির-করা;—গম্বুজের প্রকাণ্ড ভিতর-পিঠ প্রস্তরচূর্ণের মস্‌লায় নির্ম্মিত। কিন্তু ইহার এই স্থায়ী ধবলতার সহিত সোনার রং প্রচুরপরিমাণে মিশিয়াছে। মার্ব্বেলের চেক্‌নাই-এর উপর সোনার কাজ বসাইলে তাহার যে একটা বিশেষ ‘খোলতাই’ হয়, তাহা সকলেই জানে। দেয়ালের ও গম্বুজের ভিতর-পিঠে যে সব অগণ্য লতাপাতার অতি সূক্ষ্ম কাজ খুদিয়া বাহির করা হইয়াছে, তাহা স্বর্ণ দিয়া রঞ্জিত।

 দেয়ালের যে-সকল বড়-বড় ফুকর দিয়া বিষন্ন উদ্যানটি দেখা যায়,