পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধ্বংসাবশেষের মধ্যে।
৩১৯

এমন মসৃণ ও উহার উপাদান-রেণু এমন সূক্ষ্ম যে, এত শতাব্দী হইয়া গেল, তবু উহাতে ‘মোর্চ্চে’ ধরে নাই এবং উহার রং এখনো যেন টাটকা রহিয়াছে। গোলাকার খোদিত-‘খোল’, যাহা তলদেশ হইতে চূড়া পর্য্যন্ত উঠিয়াছে, উহা স্ত্রীলোকদিগের গাউনের একপ্রকার রেশ্‌মি ভাঁজের মত; ছাতা বন্ধ করিলে সেরূপ ভাঁজ পড়ে, সমস্ত যেন সেইরূপ ভাঁজবিশিষ্ট। সমস্তটা দেখিলে মনে হয়, যেন অর্গ্যান্‌-পাইপের একটা বাণ্ডিল, বড়বড় তালকাণ্ডের একটা গুচ্ছ; এবং বিভিন্ন উচ্চদেশে যেন একএকটা আংটার মধ্যে ঐগুলা আবদ্ধ—যাহাকে, আংটা বলিতেছি, উহা পাথরের বারণ্ডা-ঘের; শাদা খচিত-কার্য্যের আকারে মুসলমানি লিপির দ্বারা ঐ সকল বারণ্ডা সমাচ্ছন্ন…

 আমি প্রায় ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলাম। …সহসা মানুষের পায়ের শব্দ—দ্রুতগমনের শব্দ! এত ঘণ্টা নিস্তব্ধতার পর, এ একটা অচিন্তিতপূর্ব্ব পরিবর্ত্তন। ১০জন লোক, একঘেয়ে-লাল বড়-বড় পাথরের উপর দেখা দিল; উত্তর প্রদেশের মুসলমান, ছুঁচাল টুপি দেখিয়া আফ্‌গান বলিয়া চিনিলাম; পাগ্‌ড়ির পাক এত নীচে দিয়া গিয়াছে যে, উহাদের কান ও চোখের কোণ তাহাতে ঢাকিয়া গিয়াছে, কেবল শুকচঞ্চু-নাসিকামাত্র বাহির হইয়া আছে। দাড়ির রং মিষ‌্-কালো। উহারা খুব দ্রুত চলিতেছে; মুখে খলতা ও বদমাইসি প্রকাশ পাইতেছে। আমার কোটরে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া, আমি যে উপরে আছি তাহা ইঙ্গিতেও প্রকাশ না করিয়া, উহাদের দেখিয়া আমোদ উপভোগ করিতেছিলাম। স্পষ্টই দেখা যাইতেছে, উহারা ভক্ত তীর্থযাত্রী, ভক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হইয়াই এইখানে আসিয়াছে। লুপ্তপ্রায় মস্‌জিদের সুন্দর দ্বারপ্রকোষ্ঠের সম্মুখে আসিয়া উহারা দাঁড়াইল; সমাধিস্থান চুম্বন করিবার জন্য সাষ্টাঙ্গে প্রণত হইল; তাহার পর তাড়াতাড়ি উঠিয়া আরো দুরে চলিয়া গেল; ভগ্নাবশেষের মধ্যে কোথায় মিলাইয়া গেল—আর দেখা গেল না।