পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিতাসজ্জা।
৩২১
চিতাসজ্জা।

 শীতকাল; গঙ্গার উপর; ধূসরবর্ণ সন্ধ্যা আগত প্রায়। দিবাবসানে পবিত্র নদীবক্ষ হইতে কুয়াসা উত্থিত হইয়া, সন্ধ্যা না হইতে হইতেই অস্তমান সূর্য্যকে স্নান করিয়া ফেলিল। অবনত মন্দির ও চূর্ণপ্রাসাদসমন্বিত বারাণসীর বিপুল ছায়াচিত্র পশ্চিমদিগের সম্মুখে খাড়া হইয়া উঠিয়াছে। পশ্চিমগগন এখনো প্রভাময়।

 আর-সব নৌকা নিদ্রিত; কেবল আমার নৌকাখানি চলিতেছে,—এই পবিত্র নগরীর পাদদেশ দিয়া, উহার বিরাট্‌ ছায়াতল দিয়া, অত্যুচ্চ ভগ্নমন্দির ও অতীব ঘোরদর্শন প্রাসাদাদির নীচে দিয়া—ধীরে ধীরে চলিতেছে।

 তিনবৎসরব্যাপী যে অনাবৃষ্টি দেশে দুর্ভিক্ষ আনিয়াছে, তাহাতেই নদী শুকাইয়া গিয়াছে; এবং এই কারণেই সকল জিনিষেরই উচ্চতা যেন আরো বেশী বলিয়া মনে হইতেছে। এই শুষ্কতাবশতই বারাণসীর অনাদিকালের মূলগুলা পর্য্যন্ত, ভিত্তিগুলা পর্য্যন্ত অনাবৃত হইয়া পড়িয়াছে। শতশত বৎসর হইতে, যে সকল প্রাসাদ জলের নীচে নামিয়া গিয়াছিল, তাহারই খণ্ডাংশসমূহ অচল নৌকাগুলার মধ্য হইতে ইতস্তত মাথা বাহির করিয়া রহিয়াছে। জলমগ্ন জনবিস্মৃত ভগ্নাবশেষগুলা আবার দেখা দিতে আরম্ভ করিয়াছে। বৃদ্ধা গঙ্গার ভগ্নাবশেষপূর্ণ রহস্যময় তলদেশ অল্প অল্প দেখা যাইতেছে।

 এই যে সব তটভূমি বিবস্ত্রা হইয়া পড়িয়াছে, ইহাতেই এই গঙ্গাদেবীর বিকট স্বৈরশীলার পরিচয় পাওয়া যায়; ইনি পালনকর্ত্রী ও সংহারকর্ত্রী—উভয়ই। যিনি জনয়িতা ও সংহারকর্ত্তা, সেই শিবের সহিত ইহার তুলনা হইতে পারে; প্রাবৃটে যখন নদী ভরিয়া উঠে, তখন তাঁহার ভীষণ বেগ কেহই প্রতিরোধ করিতে পারে না। সর্ব্বোন্নত পাষাণপ্রাচীর,