পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিতাসজ্জা।
৩২৩

সেইখান হইতে—নামিয়া-আসিয়া পবিত্র জলরাশির অভিমুখে প্রসারিত হইয়াছে।

 আজিকার সন্ধ্যায়, এই বৃহৎ ঘাটের শেষ-ধাপটি পর্য্যন্ত, এমন কি, ঘাটের ভিত-দেয়ালটি পর্য্যন্ত বাহির হইয়া পড়িয়াছে। দুর্বৎসর ছাড়া এই ভিত-দেয়াল কখনো বাহির হইয়া পড়ে না—ইহা দুর্ভিক্ষ ও দুঃখদৈন্যের পূর্ব্বসূচনা। এই মহিমান্বিত বৃহৎ সোপানপংক্তি এখন একেবারেই জনশূন্য—এখানে ফলবিক্রেতা, পবিত্র গাভীবৃন্দের জন্য যাহারা তৃণবিক্রয় করে সেই তৃণবিক্রেতা, বিশেষত এই লোকপাবনী পরমরাধ্যা বৃদ্ধা নদীর উপর যে পুষ্পাঞ্জলি নিক্ষিপ্ত হয়, সেই সকল ফুলের তোড়া ও ফুলের মালাবিক্রেতা—ইহাদের দ্বারাই সোপানের ধাপগুলা দিবা দ্বিপ্রহর পর্য্যন্ত আচ্ছন্ন হইয়া থাকে। এবং অসংখ্য বাখারির ছাতা—যাহা সকলকেই ছায়াদান করে, সেই সকল ছাতার বাঁট মাটির মধ্যে স্থায়িভাবে পোঁতা এবং ঐ সকল ছাতা যেন প্রাতঃসূর্য্যের প্রতীক্ষায় উদয়াচলের দিকে ঝুঁকিয়া রহিয়াছে।

 এই ভাজবিহীন আতপত্রগুলি দেখিতে কতকটা ধাতুময় চাক্‌তির মত, এবং যতদূর দৃষ্টি যায়, নগরীর সমস্ত প্রস্তরময় তলদেশ এই সকল আতপত্রে সমাচ্ছন্ন। দেখিলে মনে হয়, যেন ঢালের ক্ষেত্র প্রসারিত।

 ম্লানপ্রভু আলোকচ্ছায় সন্ধ্যার আগমনবার্ত্তা জানাইয়া দিল এবং হঠাৎ শৈত্যের আবির্ভাব হইল। বারাণসীতে আসিয়া ধূসর আকাশ ও শীতের লক্ষণ দেখিব, এরূপ প্রত্যাশা করি নাই।

 প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড তমোময় পাষাণপিণ্ডের পাদদেশ দিয়া, তটভূমি ঘেঁষিয়া আমার নৌকা স্রোতের মুখে নিঃশব্দে চলিয়াছে।

 নদীতটের একটা বীভৎস কোণে, প্রাসাদের ভাঙাচূরার মধ্যে, কালো মাটি ও পাঁকের উপর, তিনটি ছোট-ছোট চিতা সজ্জিত; ‘ন্যাক্‌ড়া’-পরা কতকগুলা কদাকার লোক তাহাতে আগুন ধরাইবার চেষ্টা করিতেছে;