পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-মহারাজের রাজ্যাভিমুখে।
২৯

অন্ধকারের মধ্যে চলিয়াছি,“উহা দুর্গপ্রাচীরের ন্যায় কঠোরভাবে খাড়া হইয়া আছে। যে বিজন পথটি আমরা অনুসরণ করিতেছি, উহা সেই পবিত্র গণ্ডিরই সামিল,—যাহার মধ্যে নীচজাতীয় লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এইখানে আর-একপ্রকার প্রকাণ্ড স্তূপের পাশ দিয়া আমরা চলিয়া গেলাম—উহা দৈবক্রমে ঐস্থলে আটকাইয়া পড়িয়াছে। উহাও দেখিতে দেবমন্দিরের ন্যায়—কতকগুলি বিরাট্ চাকার উপর স্থাপিত; পর্ব্ব-উৎসবের দিনে দেবতাদিগকে হাওয়া খাওয়াইবার জন্য সহস্র-সহস্র লোক এই রথগুলিকে টানিয়া লইয়া যায়; রথের চাকা বসিয়া গিয়াছে, তাই আজ রাত্রে দেবতারা মর্ত্ত্যদিগেরই ন্যায় এইখানেই নিদ্রা যাইবেন।

 আমাদের দুই ধারে সারি-সারি তালজাতীয় উচ্চবৃক্ষ—উহাদের কালোকালো পাখা ঝুঁকিয়া রহিয়াছে; যে সময়ে আমরা এই তরুবীথির মধ্য দিয়া চলিয়া আসিলাম, সেই সময়ে ভক্তির প্রচণ্ড উন্মত্ত উল্লাস চারিদিকে উচ্ছসিত হইতেছিল, সেই সময় ধর্ম্মের কতকগুলি বিশেষ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ চলিতেছিল। এই প্রশান্ত সুন্দর রাত্রিতে, গহ্বর-গভীর ঢাকের শব্দ, তূরীর পৈশাচিক নিনাদ আমাদের পশ্চাতে শুনা যাইতেছে; সে এরূপ বিকট শব্দ যে, শুনিয়া সর্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠে।

 এখনো আমরা পলঞ্চটাগ্রামে। মশকপতঙ্গাদি তাড়াইবার জন্য তাম্রমুর্তি ভৃত্যগণ সমস্ত রাত বড়-বড় হাতপাখায় আমাকে বাতাস করিয়াছে।

 এক্ষণে এই বহুপুরাতন সৌধধবল ক্ষুদ্র বাড়ীর মধ্যে অরুণ-কিরণ প্রবেশ করিয়াছে; হাস্যময়ী উষার প্রভায় গৃহটি উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছে। সূর্যোদয়ে সূর্যের দীপ্যমান মহিমার মধ্যে আমি জাগ্রত হইলাম।

 শিশিরসিক্ত বারণ্ডাটি এখনো বেশ ঠাণ্ডা। এটি সুন্দর বসিবার স্থান। ঝরাটি সৌধপ্রলেপে তুষারশুভ্র। উহার মোটা-মোটা খাটো-খাটো অসমান (অনিচ্ছাকৃত) থামগুলি চামেলি-লতায় ঘেরা।