পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিতাসজ্জা।
৩২৯

মন্দিরচূড়ায় একএকটা বিশেষ ঝাঁক আছে, তাহারা সেই চূড়ারই চতুর্দ্দিকে ঘোরপাক দিয়া চক্রাকারে উড়িয়া বেড়ায়। নদীসমুত্থিত কুয়াস ক্রমেই ঘনাইয়া আসিতেছে, সন্ধ্যাবায়ু ক্রমেই শীতল হইয়া আসিতেছে এবং গলিত দ্রব্যাদির দুর্গন্ধে ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিতেছে। সেই নবযৌবনা দেবীমূর্ত্তির চিতারোহণ দেখিবার জন্য আরো কিছুক্ষণ আমার এখানে থাকিবার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু তাহা হইলে অনেক বিলম্ব হইবে; তা ছাড়া, বিশ্বাসঘাতক ঐ লাল বস্ত্রখণ্ড দেবীর সমস্ত দেহষষ্টিকে এমনভাবে অনাবৃত করিয়া রাখিয়াছে যে, দেখিতে বড়ই সঙ্কোচবোধ হয়; এ সময়ে এতটা দেখা একপ্রকার দেবাবমাননা;—কেন না, উনি এখন মৃত। না, যখন দাহের সময় হইবে, বরং সেই সময়ে, একটু পরে আবার এখানে অসিব। এখন এখান হইতে যাওয়া যাক্‌।

 কি অক্লান্ত-প্রলয়ঙ্করী এই গঙ্গা! কত প্রাসাদ ইহার স্রোতে চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া গিয়াছে! প্রাসাদসমুহের সমগ্র মুখভাগ স্খলিত হইয়া অটুটভাবে নীচে নামিয়া আসিয়াছে এবং অর্দ্ধনিমজ্জিত হইয়া ঐখানেই রহিয়া গিয়াছে। আর এখানে দেবালয়ই বা কত! নীচেকার যে সকল মন্দির নদীর খুব ধারে, উহাদের চূড়াগুলা ইটালীর ‘পিজা’-স্তম্ভের ন্যায় ঝুঁকিয়া রহিয়াছে এবং উহার মূলদেশ এরূপ শিথিল হইয়া গিয়াছে যে, প্রতিবিধানের কোন উপায় নাই। কেবল উপরের মন্দিরগুলা প্রস্তররাশির দ্বারা—সর্বকালের রাশীকৃত পাষাণভিত্তির দ্বারা সংরক্ষিত হওয়ায়, উহাদের রক্তিম চূড়াগ্রভাগ কিংবা সোনালী চূড়াগ্রভাগ এখনো সিধা রহিয়াছে এবং আকাশ ভেদ করিয়া উর্দ্ধে উঠিয়াছে, এবং এই প্রত্যেক চূড়ার সঙ্গে এক-এক ঝাক কালো পাখাও রহিয়াছে।—খুঁটিনাটি করিয়া দেখিতে গেলে, এ দেশের এই মন্দিরচূড়াগুলার আকারে একপ্রকার রহস্যময় ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। আমি ইতিপূর্ব্বে আমাদের “গোরস্থানের বৃহৎ ঝাউগাছের” সহিত ইহার তুলনা দিয়াছি, কিন্তু কাছে