পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

হইয়া পড়িতেছি—ঘোরতর আসক্ত হইয়া পড়িতেছি—উদ্ধারের কোন উপায় দেখি না।…

 আবার সেইসব চিতার নিকট ফিরিয়া আসিলাম।...এইবার প্রকৃত সন্ধ্যার আবির্ভাব হইয়াছে; পাখীদের আকাশভ্রমণ শেষ হইয়াছে; উহারা মন্দিরপ্রাসাদাদির প্রত্যেক কার্ণিসের উপর রাত্রিবাসের জন্য একটা দীর্ঘ রজ্জুর আকারে সারি সারি বসিয়া গিয়াছে—পাখার ঝাপ্‌টাঝাপ্‌টিতে রজ্জুটা যেন স্পন্দিত হইতেছে—আজিকার মত ইহাই উহাদের শেষ ঝাপ্‌টাঝাপ্‌টি। মন্দিরচুড়াগুলা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আর দেখা যাইতেছে না;—কালো-কালো বৃহৎ ঝাউগাছের আকার ধারণ করিয়া পাণ্ডুবর্ণ আকাশের অভিমুখে সমুত্থিত হইয়াছে। ফুল, ফুলের মালা, পত্র তৃণাদির জঞ্জাল টানিয়া-লইয়া আমার নৌকা আবার সেই চিতার নিকট ফিরিয়া আসিল।

 একটা স্থূল গন্ধ,—মৃত্যুর গন্ধ, বীভৎস গলিতদ্রব্যের গন্ধ ক্রমশ বাড়িতে লাগিল। ঠিক্‌ যেখানটায় চিতার ধোঁয়া উঠিতেছে, তাহার নিকটে উপনীত হইবার জন্য আবার আমাকে সেই ধ্যানমগ্ন লোকদিগের পাশ দিয়া—সেই অচলমূর্ত্তি ব্রাহ্মণদিগের ভারে ভারাক্রান্ত অসংখ্য ডিঙীর পাশ দিয়া যাইতে হইল। এই সমস্ত লোক, যাহারা যোগানন্দে আত্মহারা, যাদের মুখ ভস্মে আচ্ছন্ন, যাহাদের জ্বলন্ত চক্ষু আমার চক্ষুর উপর নিপতিত—অথচ যাহারা আমাকে দেখিয়াও দেখিতেছে না—ইহাদের গা ঘেঁষিয়া আমার নৌকা চলিতেছে, তবু যেন আমার মনে হইতেছে—আমাদের মধ্যে কি-একটা অনির্দ্দেশ্য দূরত্বের ব্যবধান রহিয়াছে।

 শ্মশানের সেই কোণটিতে আমার পোঁছিতে একটু বেশী বিলম্ব হইল। একটা বৃহৎ চিতা—ধনিলোকের চিতা দাউ-দাউ করিয়া জ্বলিতেছে—এবং তাহা হইতে স্ফুলিঙ্গ ও শিখারাশি প্রবলবেগে উর্দ্ধে উঠিতেছে। চিতার মাঝখানে সেই তরুণী, তাহার আর কিছুই দেখা