পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

তাহা আবার পরস্পরের নিকটবর্ত্তী হইবে, একপ্রকার আনন্দহীন মোক্ষাবস্থায় উপনীত হইয়া পুনর্মিলিত হইবে।…

 সে যাহাই হউক, প্রাচীরের পাথরের উপর বসিয়া দরিদ্র-বসনে অবগুণ্ঠিত যে দুইটি জরাবনত মনুষ্যমূর্ত্তি উপর হইতে অবিচলিতভাবে মৃতশিশুর দাহকার্য নিরীক্ষণ করিতেছিল, উহাদের মধ্যে একজন দাঁড়াইয়া উঠিল এবং মুখের অবগুণ্ঠন সরাইয়া, আরো নিকট হইতে ভাল করিয়া দেখিবার জন্য ঝুঁকিয়া দেখিতে লাগিল। সেই তরুণীর চিতার আলোকে ক্ষুদ্র বালকটির মুখশ্রী সম্পূর্ণরূপে আলোকিত হইয়া উঠিল। একজন শীর্ণকায়া বৃদ্ধা যেন এইভাবে জিজ্ঞাসা করিল—“সমস্তটা ভাল করে’ পুড়েছে ত?” স্ত্রীলোকটি খুব প্রাচীন; মা অপেক্ষা দিদিমা হওয়াই সম্ভব;—কখন, কখন নাতিনাত্নী ও পিতামহীর মধ্যে কি-একটা রহস্যময় আকর্ষণ,—একটা অসীম স্নেহের বন্ধন দেখিতে পাওয়া যায়।—“সমস্তটা ভাল করে’ পুড়েছে ত?” তাহার ব্যাকুলনেত্র যেন এই ভাবটি প্রকাশ করিতেছে—“যতটা কাঠের দরকার, অর্থাভাবে তাহা কিনিয়া দিতে পারি নাই; এখন ভয় হয়, পাছে নির্দ্দয় দাহকেরা, যাহা এখনো চেনা যাইতেছে, সেই সব অদগ্ধ অংশ গঙ্গায় ফেলিয়া দেয়। আবার সে ঝুঁকিয়া ব্যাকুলভাবে দেখিতে লাগিল—ধনীদের চিতার আলোকে দেখিতে লাগিল। এদিকে দাহক, আর কিছুই অবশিষ্ট নাই ইহা দেখাইবার জন্য, একটা ডাল দিয়া পোড়া-কাঠগুলা নাড়িয়া দিল। তখন সে ইঙ্গিত করিয়া যেন এইভাবে বলিল, “হাঁ, ঠিক্‌ হয়েছে। এখন যাও; এখন ওগুলা গঙ্গায় ফেলিয়া দিতে পার।” কিন্তু তাহার দৃষ্টিতে সেই চিরন্তন মানবহৃদয়ে তীব্র বেদনা দেখিতে পাইলাম, যাহা কি ভারতে, কি অস্মদ্দেশে—সর্ব্বত্রই সমান;—যাহা আমাদের সাহস কিংবা অস্পষ্ট আশা-ভরসা সত্ত্বেও, সময়কালে আমাদের সকলের নিকটেই দুর্দ্দমনীয় হইয়া উঠে। যাহা এইমাত্র ধ্বংস হইয়া গেল, সেই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষুদ্রমূর্ত্তিটিকে বোধ হয় উহার দিদিমা ভালবাসিত;—উহার ক্ষুদ্র মুখখানি,