পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহ।
৩৩৫

উহার মুখের ভাবটি, উহার হাসিটি ভালবাসিত; এখনো উহার যথেষ্ট বৈরাগ্যের উদয় হয় নাই, এবং ব্রাহ্মণের নির্ব্বিকারভাব এইবার যেন একটু খর্ব্ব হইল -কেন না, সে কাঁদিতে লাগিল।…

 যে-সব ক্ষুদ্রশিশু আমাদের ছাড়িয়া চলিয়া যায়, তাহাদের নেত্রের সেই মধুর দৃষ্টিটি, কিংবা আমাদের পিতামহী প্রভৃতির সেই স্নেহের দৃষ্টিটি কিংবা তাঁহাদের সেই পলিতকেশ আমাদের নিকট আবার ফিরাইয়া দিবে,—এইরূপ কোন ধর্ম্মই কি অঙ্গীকার করিতে সাহস করে? এমন কি, যাহা সর্ব্বাপেক্ষা মধুর, সেই খৃষ্টধর্ম্মও, কি এইরূপ অঙ্গীকার করিতে সাহস করে?…

 দরিদ্র-চিতাটির শেষ-অঙ্গার ও ভস্মাবশষেগুলা একটা কাঠের হাতা করিয়া উহারা গঙ্গায় ফেলিয়া দিল।

 পাশের চিতাটির উপর সেই রূপলাবণ্যসম্পন্ন তরুণীর পা—যে পায়ের আঙুল গুলা ছাড়া-ছাড়াভাবে ছিল, সেই পা-খানি অবশেষে ভস্মরাশির মধ্যে খসিয়া পড়িল।


তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহ।

 একটি পুরাতন উদ্যানের প্রান্তভাগে একটি সামান্য হিন্দুগৃহ, অত্যন্ত নিম্ন ও কালের চিহ্নে ঈষৎ চিহ্নিত; সব শাদা—চুকাম-করা; আমার জন্মভূমির সেকেলে বাড়ীর মত ঝিল্‌মিলিগুলা সবুজ। গৃহের ছাদ, শাদা-শাদা কতকগুলা পিল্লার উপর স্থাপিত এবং চারিপার্শ্ব হইতে বারণ্ডার আকারে সম্মুখে অনেকটা বাহির হইয়া আসিয়াছে। বেশ বুঝা যাইতেছে, এখনো আমি সেই চিরন্তন সূর্য্যের দেশেই অবস্থিতি করিতেছি। কিন্তু এই পোড়ো-ধরণের বাগানটির মধ্যে এমন কিছুই নাই, যাহা আমার চোখে বিদেশী কিংবা নিতান্ত অপরিচিত বলিয়া মনে হইতে পারে।