পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

চতুর্দ্দিকে মাঠ-ময়দান, গ্রাম্য নিস্তব্ধতা, বিমল প্রাভাতিক শান্তি। যদিও অত্রস্থ প্রকৃতিসুন্দরী একটু তাপদগ্ধা, শরতের প্রভাবে গুফতানিবন্ধন একটু অবসাদক্লিষ্টা, তথাপি এখানকার আলোকরশ্মি দক্ষিণফ্রানসের সুন্দরতম প্রভাতকিরণের ন্যায় দিব্য প্রশান্ত। এখানে বড় বড় তালজাতীয় বৃক্ষ নাই; অথবা সিংহলের ন্যায় উদ্দাম উদ্ভিজ্জের প্রাচুর্য নাই। অস্মদ্দেশীয় অরণ্যের ন্যায় এখানকার বৃক্ষগুলি অনতি-উচ্চ ও বিরলপল্লব। ছিন্নতৃণ মাঠ-ময়দান, ফলের বাগান, ছাঁটা-ঘাসের উপর অঙ্কিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পায়ে-চলা পথ, দূরে বৃক্ষশাখার মধ্য হইতে পরিদৃশ্যমান চুন্ামকরা ছোেট ছোট প্রাচীর, সুধাধবল, ছোট-ছোট বাড়ী—এই সকল আমি অবলোকন করিতেছি, এবং আমার শৈশবের সুপরিচিত দৃশ্যগুলি আবার আমার চতুর্দ্দিকে দেখিয়া বিস্মিত হইতেছি।

 যে চড়াইপাখি আমাদের গৃহছাদে নীড় নির্ম্মাণ করে, সেই নিতান্ত গ্রাম্য পাখীগুলাও এখানে আছে দেখিতেছি। কেবল এইমাত্র প্রভেদ, ভারতের জীবজন্তুমাত্রেরই মানুষের উপর যেরূপ অগাধ বিশ্বাস, ইহাদেরও তদ্রুপ; মানুষ নিকটে গেলে উহারা পলায় না।

 আমি দেখিতে পাইতেছি, স্বদেশসাদৃশ্যজনিত বিস্ময় যেন আমার জন্য এদেশে স্থানে স্থানে সঞ্চিত রহিয়াছে। এই ভরপূর শীতের সময়ে, আমাদের গ্রীষ্মদেশের শোভাসৌন্দর্য্য এখানে সম্ভোগ করিতেছি।...

 আমি যে ভারতবর্ষে আছি, এই জ্ঞানটি আমার অন্তরের অন্তস্তলে জাগরূক থাকিলেও, যখনি আমি এখানকার কোন অনাদৃত জনবিরল স্থানে আসিয়া উপস্থিত হই, তখনি একপ্রকার মধুর বিস্ময়সহকারে জন্মভূমিসম্বন্ধীয় বিবিধ বিভ্রমের হস্তে আপনাকে ছাড়িয়া দিই।

 এই সকল ছোট-ছোট শাদা প্রাচীর, চামেলি-লতা,হলদে-রং-ধরা ঘাস, শরৎঋতুসুলভ বিচিত্র রং— এই সমস্ত স্বদেশকে স্মরণ করাইয়া দেয় ও মন ব্যাকুল হইয়া উঠে। তখন সেই Aunis,—সেই La Saintonge-র