পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহ।
৩৩৭

জড়ানো, যাঁহারা সমস্ত তত্ত্ব তন্ন-তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করেন, যাঁহারা সংসারের মোহমায়ায় ভোলেন না। ইহারা সব মহাপণ্ডিত,—পার্থিববিষয়ের প্রতি নিতান্ত উদাসীন বলিয়া যাঁহাদিগকে রাস্তার মুটে-মজুর বলিয়া ভ্রম হয়, কিন্তু যাঁহারা য়ুরোপের সূক্ষ্মতম ও আধুনিকতম দর্শনগ্রন্থসকল বিচার করিয়া দেখিয়াছেন এবং যাঁহারা প্রশান্তভাবে ও নিঃসংশয়চিত্তে তোমাকে বলিবেন—“তোমাদের দর্শনের যেখানে শেষ, আমাদের দর্শনের সেইখানেই আরম্ভ।’’

 এই তত্ত্বজ্ঞানীরা—হয় একাকী, নয় সমবেত হইয়া কাজ করেন, ধ্যান করেন। একটা সামান্য মেঝের উপর কতকগুলি সংস্কৃতগ্রন্থ উদ্ঘাটিত রহিয়াছে—যাহার মধ্যে ব্রাহ্মণ্যধর্ম্মের গূঢ়তত্ত্বসকল নিহিত এবং যে সকল তত্ত্ব আমাদের দর্শন ও ধর্ম্মের বহুসহস্রবৎসর পূর্ব্বে প্রকাশিত হইয়াছিল। আমাদের জাতির ও আমাদের যুগের লোকদের অপেক্ষা যাঁহাদের দৃষ্টির প্রসর অনন্ত গুণে অধিক, সেই পুরাকালের তত্ত্বদর্শিগণ এই সকল অতলস্পর্শগভীর গ্রন্থের মধ্যে জ্ঞানের চরমতত্ত্বরূপ মহারত্নসকল রাখিয়া গিয়াছেন। যাহা ধারণার অতীত, তাঁহারা প্রায় তাহাকে ধারণার মধ্যে আনিয়াছিলেন; এবং তাঁহাদের রচিত গ্রন্থাদি, যাহা শতশত বৎসর ধরিয়া বিস্মৃতির মধ্যে সুষুপ্ত ছিল, আজ তাহা আমাদের মত ভ্রষ্টবুদ্ধি অধম মনুষ্যের বুদ্ধির অগম্য। তাই, এই সকল তমসাচ্ছন্ন শব্দরাশির মধ্য হইতে তমোরাশি অপসৃত হইয়া যাহাতে অল্পে-অল্পে জ্ঞানরশ্মি আমাদের নিকট প্রকাশিত হয়—আমাদের দৃষ্টির প্রসর বদ্ধিত হয়, তজ্জন্য এখনো আমাদের অনেকবৎসরের শিক্ষাদীক্ষা আবশ্যক।

 মনে হয়, এই সব গ্রন্থ যদি কেহ এখন বুঝতে পারেন, তবে এই বারাণসীর তত্ত্বজ্ঞানীরাই। কেন না, ইহারাই সেই পরমাশ্চর্য্য মুনিঋষিদিগের বংশধর—যাঁহারা এই সকল গ্রন্থের রচয়িতা; ইহারা সেই একই বংশের লোক,—যাঁহারা পুরুষানুক্রমে শুদ্ধাচারী ছিলেন;—সেই একই