পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাতমহিমা।
৩৪৫

আমরা,—লৌহধূমযুগের লোক যে আমরা—আমাদের জাগরণ ধূলিময় মলিন পিপীলিকার হেয় জাগরণ! আমাদের দেশের নিবিড় ও শীতল মেঘরাশির নীচে অবস্থিত আমাদের জনসাধারণ, সুরা ও ঈশ্বরনিন্দার বিষে জর্জরিত হইয়া প্রাণঘাতী কল্‌কারখানার অভিমুখে ব্যস্তভাবে চলিয়াছে!...

 জল হইতে উঠিয়া গৃহাভিমুখে যাইবার সময় রমণীরা তাহাদের শুভ্র ও বিচিত্রবর্ণের বস্ত্রাদি আবার ঠিক্‌ঠাক্‌ করিয়া পরিয়া লয়; এবং বিশাল প্রস্তরাদির সম্মুখে যখন তাহারা ঘাটের সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে থাকে, তখন প্রাচীন গ্রীসের উৎকীর্ণ চিত্রাবলী মনে পড়িয়া যায়। তাহাদের কেশপাশ হইতে এখনও জল গড়াইয়া পড়িতেছে; তাহাদের নিবিড় ও আর্দ্র কেশগুচ্ছ, তাহাদের মল্‌মল্‌বস্ত্রের উপর এলাইয়া পড়িয়াছে। প্রত্যেকেরই স্কন্ধের উপর একটি-একটি উজ্জ্বল ধাতুময় কলস; এবং এক-একটি নগ্নবাহু উর্দ্ধে উত্তোলন করিবার ইহাই উপলক্ষ্য।

 পুরুষেবা সকলেই গঙ্গার উপরে রহিয়াছে; এবং যোগানন্দে নিমগ্ন হইবার পূর্ব্বে, আসনপিঁড়ি হইয়া বসিয়া ধর্ম্মবিহিত সমস্ত প্রসাধনকর্ম্ম সমাধা করিতেছে। শিবের সম্মানার্থ স্বকীয় পিত্তলবর্ণ গাত্র ভস্মরেখায় চিত্রিত করিতেছে এবং ললাটে ভীষণ শৈবচিহ্নের ছাপ রক্তচন্দনে অঙ্কিত করিতেছে।

 সেই শ্মশানের কোণটিতে-যেখানে প্রভাতআলোকে চতুষ্পার্শ্বস্থ চিতাধূমকালিম পাথরগুলা দেখা যাইতেছে—সেখানে এখন কোন শবেরই দাহ হইতেছে না। কাপড় দিয়া ঢাকা দুইটা শব ঐখানে পড়িয়া রহিয়াছে; কিন্তু তাহাদের লইয়া কেহই ব্যাপৃত নহে। একটা শব চিতার উপর শয়ান; আর একটি শবের অন্তিমস্নানের অনুষ্ঠান চলিতেছে; তাহারই পাশে সুন্দর বলিষ্ঠ জীবন্ত লোকেরা স্নান করিতেছে। ডিঙির উপর, ঘাটের নীচেকার সিঁড়ির উপর, পূজা—বিপুল জনতার ব্যাপক পূজা আরম্ভ