পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

সে সেই কাককে ভয় দেখাইবার জয় ক্রমাগত একটুক্‌রা কাপড় নাড়িতেছে।

 গতকল্য সন্ধ্যার সময় ইনি মরিয়াছেন; ইঁহার অন্তর্জলী-অনুষ্ঠানসমাপনান্তে—যেরূপ যোগাসনে বসিয়া ইনি সমস্ত জীবন কাটাইয়াছেন, এক্ষণে এই পূর্ণ প্রভাতমহিমার মধ্যে ইঁহাকে সেই যোগাসনের ভঙ্গীতে বসান হইয়াছে। বন্ধনীর দ্বারা বদ্ধ করিয়া ইঁহার মস্তককে পিছনে একটু হেলাইয়া দেওয়া হইয়াছে,—যাহাতে সূর্য্য ও আকাশ ভাল করিয়া দেখিতে পান।

 ইঁহার দাহ হইবে না, কেননা, যোগীদের দাই হয় না। যোগীদের পুণ্যজীবনের মাহাত্ম্যে যোগীদের শরীর পূর্ব্ব হইতেই পবিত্র হইয়া আছে। আজ সন্ধ্যাকালে, ইহার মৃতশরীরকে একটা মাটির গাম্‌লার মধ্যে সমাহিত করিয়া গঙ্গায় ভাসাইয়া দেওয়া হইবে। যে ভাগ্যবান পুরুষ পুণ্যকর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়া—সংসারবন্ধন ছেদন করিয়া, সংসারচক্র হইতে চিরমুক্তি লাভ করিয়াছেন, জীবন ও মৃত্যুর অতলস্পর্শ রসাতল হইতে উদ্ধার পাইয়াছেন, লোকেরা তাঁহাকে প্রফুল্লবদনে অভিনন্দন করিতেছে, অভিবাদন করিতেছে, সাধুবাদ করিতেছে।

 একটা কুকুর শবের নিকটে আসিল, তাহার গা সুঁকিল, তাহার, পর পুচ্ছ নত করিয়া চলিয়া গেল। তিনটা লালরঙের পাখী আসিয়া তাহারাও শবকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। একটা বানর নাবিয়া আসিল, শবের আর্দ্র পরিচ্ছদের তলদেশ স্পর্শ করিল এবং স্পর্শ করিয়াই একদৌড়ে ঘাটের মাথায় উঠিয়া বসিল। সেই রক্ষী যুবকটি ইহাদিগকে কিছুমাত্র নিবারণ করিতেছে না,—সব সহ্য করিতেছে। এদেশের লোকেরা পশুপক্ষীর অত্যাচার অকাতরে সহ করিয়া থাকে। সেই নাছোড়বান্দা কাকটা, পচা শবের গন্ধ পাইয়া পুনঃপুন ফিরিয়া আসিতেছে; এবং তাহার কালো ডানা, প্রায় মৃতযোগীর মুখ ঘেঁষিয়া যাইতেছে।