পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্ণমন্দিরের নিকটস্থ একজন ব্রাহ্মণের গৃহে।
৩৪৯
স্বর্ণমন্দিরের নিকটস্থ একজন ব্রহ্মণের গৃহে।

 “অলৌকিক কাণ্ড!…এখানকার সন্ন্যাসীরা পূর্ব্বে বোধ হয় অলৌকিক কার্য্যসকল দেখাইতে পারিত, কেহ কেহ হয় ত এখনও দেখাইতে পারে…কিন্তু আমাদের মনীষিরা এই উপায়ে লোকের বিশ্বাস উৎপাদন করা হেয় জ্ঞান করেন।…না,−গভীর ধ্যানধারণাই ভারতীয় পন্থা; ধ্যানধারণাই আমাদিগকে সত্যের পথে লইয়া যায়...’’

 যিনি আমাকে এই কথা বলিলেন, তিনি একজন বৃদ্ধব্রাহ্মণ; তাঁহার, “পণ্ডিত” উপাধি। অর্থাৎ তিনি সংস্কৃত ভাষায় ও সংস্কৃত দর্শনশাস্ত্রে সুপণ্ডিত। অলৌকিক ব্যাপারের প্রতি সেই নিস্তব্ধ ক্ষুদ্র গৃহের তত্ত্বজ্ঞানীদের যেরূপ অবজ্ঞা, ইহারও দেখিলাম সেইরূপ অবজ্ঞা।

 সন্ধ্যার সময়, বারাণসীর হৃদয়দেশে তাঁহার পুরাতন গৃহের ছাদের উপর বসিয়া আমরা বাক্যালাপ করিতেছি। ছাদটি ক্ষুদ্র, বিষন্ন ও চারিদিকে বদ্ধ; একটা বাহিরের সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে হয়; একটা সরু রাস্তা হইতে সিঁড়িটা উঠিয়াছে। আমার দোভাষী জাতিতে ‘পারিয়া’, সুতরাং এখানে তাহার প্রবেশ নিষিদ্ধ; সে বাহিরের সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে দাঁড়াইয়া রহিল। যখন সে আমাদের কথা ভাষান্তর করিয়া বুঝাইতেছিল, তখন মনে হইতেছিল, যেন সন্ধ্যার শব্দবাহী নিস্তব্ধতা ভেদ করিয়া দূর হইতে তাহার কণ্ঠস্বর আসিয়া পৌঁছিতেছে! অনুবাদের কার্য্যে মাতিয়া উঠিয়া ভ্রমক্রমে যদি কখন সে দরজার চৌকাঠে পা রাখে, অমনি বৃদ্ধব্রাহ্মণ তাহাকে চিরন্তন লোকাচারের কথা স্মরণ করাইয়া দেন, সেও পিছু হটিয়া যায়। তিনি থিয়সফিষ্টসমাজভুক্ত নহেন,—তাই বর্ণভেদপ্রথার নিয়ম তিনি লঙ্ঘন করেন না।

 এই ছাদের উপর হইতে আর কিছুই বড় দেখা যায় না,−দেখা যায় শুধু চতুর্দ্দিকে কতকগুলা জরাজীর্ণ প্রাচীর—যাহার পলস্তরা রৌদ্রে,