পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

ফাটিয়া গিয়াছে; আর দেখা যায়, আকাশে কাকের ঝাঁক উড়িয়া বেড়াইতেছে। কিন্তু এই জরাজীর্ণতার মধ্য হইতে, এই সমস্ত ধ্বংসাবশেষের মধ্য হইতে, খুব নিকটেই একটা আশ্চর্য্য জিনিষ মাথা তুলিয়া রহিয়াছে;—স্বর্ণকারের হাতের একটি অতুলনীয় কারুকার্য্য; ইহা অস্তমান সূর্য্যের শেষরশ্মির গতিরোধ করিতেছে, এবং এই সময়ে ইহার উপর যত টিয়াপাখী আসিয়া জড়ো হইয়াছে। ইহা “স্বর্ণমন্দিরের’’ একটা গম্বুজ।

 আমি মধ্যে-মধ্যে এই শ্রদ্ধাস্পদ পণ্ডিতের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। তাঁহার ধন-ঐশ্বর্য্যের মধ্যে একটি পুস্তকাগার ও শতশতবর্ষ পুরাতন কতকগুলি পুঁথি। বারাণসীর যে অংশটি সর্ব্বাপেক্ষা পুরাতন ও পবিত্র, সেইখানেই তাঁহার গৃহ। একাকারের মহাপ্রবর্ত্তক বেল যেখান দিয়া গিয়াছে, সেই ইতর জঘন্য আধুনিক অঞ্চল হইতে এই স্থানটি বহুদূরে অবস্থিত। ইহার পারিপার্শ্বিক দৃশ্যে কোনই পরিবর্ত্তন ঘটে নাই; সুতরাং এইখানে আসিলে পুরাকালের ভাব মনের মধ্যে জাগিয়া উঠে, বারাণসীর সেই গুহ্যধর্মের রহস্যময় ভাবে চিত্ত পরিপ্লাবিত হয়, চিত্তকে যেন দূর অতীতে পিছাইয়া আনে অনিত্য সংসারকে ক্রমাগত স্মরণ করাইয়া দেয়, এবং চিন্তাপ্রবাহকে সংসারের পরপারে লইয়া যায়। সেই ধবলগৃহের তত্ত্বজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন,—কতকগুলি স্থানের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে; এরূপ কতকগুলি নগর আছে—যথা বারাণসী, মক্কা, লাসা, জেরুসালেম,—যে সকল নগর আধুনিক সংশয়বাদের আক্রমণসত্ত্বেও, দেবারাধনার ভাবে এরূপ ভরপূর যে, সেখানে পার্থিব মায়াবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া কতকটা অসীমের সান্নিধ্য উপলব্ধি করা যায়। তাঁহারা বলেন,—এমন কি, শুধু মন্দিরাদির বৃহত্ত্ব—শুধু অনুষ্ঠানাদির আড়ম্বরও কতকটা আত্মার উপর প্রভাব প্রকটিত করে। উহার কিছুই নিস্ফল নহে।