পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বারাণসীতে যদৃচ্ছাভ্রমণ।
৩৫১

বারাণসীতে যদৃচ্ছাভ্রমণ।

 বিহগকুজনবিখণ্ডিত নিস্তব্ধতার মধ্যে, অতীব নূতন ও ভীষণ আকারে অনন্তের ভাব যেস্থানে আমার মনে প্রবিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছিল, সেই তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহ হইতে চলিয়া আসিবার পর, অনন্তের চিন্তায় আমার মাথা ঘুরিয়া গিয়াছিল। তাই এই পৃথিবীর ক্ষুদ্র মরীচিকার মধ্যে আবার ফিরিয়া-আসা আবশ্যক বোধ করিলাম।

 আমার ক্ষুদ্র গৃহ হইতে বাহির হইবার পর হইতে প্রাচ্যদেশের পরীদৃশ্য বরাবর আমার নেত্রসম্মুখে রহিয়াছে, কিন্তু আমার নিকট আর তাহার আকর্ষণ নাই। বিশেষত এই বারাণসীনগরে, পরীদৃশ্যের সহিত কি-যেন একটা অলোকসামান্য রহস্যের ভাব জড়িত; অন্যান্য স্থানেরই মত এই বারাণসী, কিন্তু তবু যেন আর সকল হইতে ভিন্ন।...

 অন্যত্র যেরূপ যেখা যায়, এখানেও সেই একই ভারতীয়-ধরণের গলিঘুঁজি রাস্তার গোলকধাঁদা, গৃহের সেই ঝালোর-বিভূষিত গবাক্ষ, সেই স্তম্ভশ্রেণী, সেই সব রংচং; বিশেষত সেই একই ধরণের পাত্‌লা-ওড়না-পরা সুন্দরী রমণীরা পথ দিয়া চলিতেছে; সঙ্কীর্ণ রাস্তার ছায়ার মধ্যে,—এবং উহাদের ধাতুময় নূপুরের উপর, বলয়ের উপর, কণ্ঠমালার উপর, রূপালি-জরির নক্‌সা-কাটা গোলাপী, জদ্দা, সবুজ শাড়ীর উপর, কদাচিৎ দুই-একটি পতিত হইতেছে; তখন পুরাতন ধূসর প্রাচীরের মধ্যে, উহাদিগকে জ্যোতির্ম্ময়ী পরীর মত দেখিতে হয় এবং তখন যদি উহারা তোমার উপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করে, তোমার মনে হইবে, যেন তাহাদের সমস্ত বেশভূষার উজ্জ্বলতা, সমস্ত দেহের লাবণ্যপ্রভা,—তাহাদের নেত্রের সেই অনিচ্ছাকৃত কোমল কটাক্ষের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হইয়াছে।…

 আবার এখানে যোগীরাও চতুষ্পথের উপর উবু হইয়া বসিয়া আছে দেখিতে পাওয়া যায়; উহারা দেবারাধনা ও মৃত্যুকে সহসা স্মরণ করাইয়া