মনুষ্যভ্রুণের মত অপরিস্ফুট—বড় বড় চোখ; রক্তবস্ত্রের মধ্য হইতে অর্দ্ধেক বাহির হইয়া আছে। এই রক্তের পূতিগন্ধের সহিত আবার বানরের গায়ের অসহ্য দুর্গন্ধ মিশিয়াছে। কতকগুলা চোখ মিট্মিট্ করিতেছে—চারি কোণ হইতেই আমার দিকে তাকাইয়া আছে; মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র কতকগুলা নির্লজ্জ দুবিনীত জীব লাফ দিয়া আমার কাঁধের উপর আসিয়া বসিল—ছোট-ছোট চটুল শীতল হস্ত আমার চুল ধরিয়া টানিতে লাগিল, আমার আস্তিনের মধ্যে ঢুকিবার চেষ্টা করিতে লাগিল…বন হইতে বাহির হইয়া এই বানরগুলা মন্দিরের মধ্যে আড্ডা গাড়িয়াছে—উহাদিগকে মন্দির হইতে বহিস্কৃত করিতে কাহারও সাহস হয় না; মন্দির ও মন্দিরসংলগ্ন উদ্যানে উহারা পিল্পিল্ করিতেছে; সকলেই উহাদিগকে ভক্তি করে; আজ প্রত্যেকেই এই অনধিকারপ্রবেশী ক্ষুদ্র জীবদিগের জন্য ছোলার দানা আনিয়াছে,—উহারা এই স্থানের যথেচ্ছাচারী প্রভু হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
সকলের মধ্যস্থলে স্বর্ণমন্দির; ইহা যেন বারাণসীর হৃদয়দেশ; এই হৃদয়টি অন্ধকেরে গলি-উপগলির জটিলতার মধ্যে সযত্নে রক্ষিত। মন্দিরটি ক্ষুদ্র; এরূপ আচ্ছাদিত যে, উহার কোন অংশই কেহ দেখিতে পায় না; এবং ইহার লোকবিশ্রুত গম্বুজগুলা পাত্লা সোনার পাতে মণ্ডিত—কেবল পার্শ্ববর্ত্তী ছাদের দর্শকদিগের নিকট অথবা গগনবিতণরী বিহঙ্গদিগের নিকটেই সুপরিচিত। যতই উহার নিকটে যাওয়া যায়, ততই জটিল গোলকধাঁদার মধ্যে আসিয়া পড়া যায়, ক্রমেই উহার পরিসর সঙ্কীর্ণ হইয়া উঠে, সাঙ্কেতিক মূর্ত্তির সংখ্যাবৃদ্ধি হয়। প্রচুর ভগ্নাবশেষ; রাশীকৃত মলা-আবর্জ্জনা; সর্ব্বত্রই বিগ্রহ—এক প্রকার প্রহরিঘরের মধ্যে অবস্থিত; হল্দে ফুলের মালা মাটীতে পড়িয়া-পড়িয়া পচিতেছে; ডিম্বের ন্যায় গোলাকার কিংবা লিঙ্গাকারে খোদিত শিলাখণ্ডসকল আধারপীঠের উপর সংস্থাপিত; এই প্রস্তরগুলা এরূপ পবিত্র যে, উহাদিগের