পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

নাচুনি-চালের পদশব্দ এবং উড়িবার পক্ষসঞ্চালনশব্দ ভিন্ন আর কিছুই শোনা যায় না।…

 হঠাৎ মনে পড়িল—খৃষ্টজন্মোৎসবের দিন আসন্ন; অমনি এখানকার এই চিরনির্ম্মল আকাশ—চীরগ্রীষ্মঋতু আমার কল্পনার উপর যেন ঘনঘোর বিষাদ ঢালিয়া দিল।

 এইবার একে-একে আমার যাত্রার গাড়িদুটি আসিয়া পৌঁছিল। এখান হইতে ত্রিবঙ্কুরে যাইতে প্রায় দুইদিন লাগিবে। সেইখানে যাইবার জন্য আমার মন উৎসুক হইয়া উঠিয়াছে। এই দেশীয় শকটগুলি সুদীর্ঘ “কফিনে”র (শবাধার) ন্যায়। পিছন দিক্‌ দিয়া উহাতে ঢুকিতে হয়; এবং পর্য্যটনকালে বাধ্য হইয়া উহার মধ্যে শুইয়া থাকিতে হয়। উহাদের বৃষবাহনেরা দুল্‌কিচালে নাচিতে নাচিতে চলে। আমার গাড়ির বৃষযুগল শাদা; উহাদের শিং নীলরঙে রঞ্জিত। ভৃত্যদের গাড়ির বৃষদুটি কপিশ রঙের; এবং উহাদের শিং তাঁবা দিয়া বাঁধানো।

 এখনও সূর্য্য অস্ত যায় নাই। ইত্যবসরে, আমাদের চারিটি নিরীহ শান্ত অলস বৃষ তৃণভূমির উপর সটান শুইয়া পড়িয়াছে।


ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।

 তিনঘটিকার সময় এখান হইতে যাত্রা করিলাম। এখন সূর্য্যের তাপ আরও প্রখর হইয়া উঠিয়াছে। শকটের ভিতরে মাদুর ও শতরঞ্জি পাতা। ছাদ এত নীচু যে, সিধা হইয়া বসিবার যো নাই; কাজেই, আহত ব্যক্তির ন্যায় পা ছড়াইয়া শুইয়া রহিলাম। গাড়ির বলদেরা দুল্‌কি-চালে নাচিতে-নাচিতে চলিতে লাগিল। এইভাবে দুইরাত্রি অবিরাম চলিলে আমার নিদ্রার বিলক্ষণ ব্যাঘাত ঘটিবে। ঘণ্টায়-ঘণ্টায় আমার বাহন ও বাহক বদলি হইবে। সমস্ত পথটায়, ডাকের গাড়ির বন্দোবস্ত আছে।