এইখানে ফিরিয়া আইসে। এই স্থানটি তীর্থযাত্রীদিগেরও একটা আড্ডা। চতুষ্পার্শ্বস্থ তপোবনের ধর্ম্মনিষ্ঠ তপস্বী, দিব্যভাবপরিব্যক্ত সুন্দর মুখশ্রী, অরুণবস্ত্রধারী, শুদ্ধচিত্ত যোগী,—রুদ্রাক্ষ ও কড়ির মালায় সর্ব্বাঙ্গ সমাচ্ছন্ন—ইহারা একটা প্রস্তরময় চতুষ্কমণ্ডপের মধ্যে আশ্রয় লইয়াছে। পুরাকালে, ইহাদেরই জন্য এই সকল মণ্ডপ নির্ম্মিত হয়। ইহাদের চতুষ্পার্শ্বে এখানকার নিত্যনিবাসী ভিক্ষু সন্ন্যাসী, মৃগীরোগগ্রস্ত সন্ন্যাসী,—জ্বরবিকারীর ন্যায় রক্তনেত্র ধরালুণ্ঠিত কঙ্কালমূর্ত্তি, যাহারা ভিক্ষার জন্য লুপ্ত-অঙ্গুলী হস্ত বাড়াইয়া দেয়, সেই সব কুষ্ঠরোগী...এই সকল জড়বৎ অচল ভস্মলিপ্ত ছদ্মবেশী লোক—যাহাদের সমস্ত জীবন যেন চোখের তারার মধ্যেই পুঞ্জীভূত,—ইহারাই মন্দিরের আশপাশে যেন একটা অস্পষ্ট বিভীষিকার ছায়া বিস্তার করিয়া রহিয়াছে; কতকগুলা বৃদ্ধ সন্ন্যাসী, যাহাদের জটাকলাপ স্ত্রীলোকের খোঁপার মত মস্তকের চূড়াদেশে উঁচু করিয়া বাঁধা;—ইহাদের দৃষ্টিপথে একবার যে পতিত হয়, ঐ ভীষণ মূর্ত্তি উপচ্ছায়ার ন্যায় তাহাকে নিয়ত অনুসরণ করে—সে কখনই তাহা ভুলিতে পারে না।
স্বর্ণমন্দিরের মধ্যে কোন বিধর্ম্মী প্রবেশ করিতে পায় না। কিন্তু দ্বারদেশের সম্মুখে, পুরোহিতদিগের একটি সেকেলে-ধরণের গৃহ আছে; এই গৃহ ও স্বর্ণমন্দির—এই উভয়ের মধ্যে একটা সরু গলিপথ। এই পুরোহিতগৃহের উপরে সকলেই অবাধে উঠিতে পারে। এখানে প্রতিদিন প্রাতে ও সন্ধ্যায় মৃত্যুদেবতার নিকট শোকসঙ্গীত হইয়া থাকে; তাহার সঙ্গে প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড ঢাক-ঢোল বাজিতে থাকে। এবং যেখানে বসিয়া তুরীবাদকেরা তুরীনাদ করে, সেই গবাক্ষবারণ্ডাটি এমন জায়গায় অবস্থিত যে, সেখান হইতে মন্দির-গম্বুজের অসীম ঐশ্বর্য্য, খুব নিকট হইতে দেখা যায়। এই মন্দিরের তিনটি গম্বুজ। একটা গম্বুজ কালো-পাথরের—উহা পিরামিড়-আকারে সজ্জিত দেবদেবীর মূর্ত্তিতে পরিপূর্ণ। আর দুইটি