পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্থৈর্য্যনাশ।
৩৫৯

হইবে! “একদিন ঈশ্বরের ক্রোড়ে গিয়া আবার তোমরা পুনর্ম্মিলিত হইবে”—বাইবেলের এই অস্পষ্ট ও মধুর আশ্বাস-বাণীর ইহাই সুস্পষ্ট ও বিষাদময় ব্যাখ্যা।

 যাহারা আমাদের ভালবাসার জিনিস তাহাদের পৃথক্‌ সত্তা স্থায়ী হইবে—ইহা একটা মায়া বিভ্রম মাত্র; তাহাদের হাসি, তাহাদের দৃষ্টি, অন্য হইতে যাহা কিছু তাহাদের বিশেষত্ব, তাহাদের অমর আত্মার যে একটু ছায়া আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়, আত্মারই মত যাহাকে আমরা নির্ব্বিকার ও অবিনশ্বর বলিতে ইচ্ছা করি—এ সমস্তই মায়া-বিভ্রম। মানব-জীবনসম্বন্ধে খৃষ্টানদের যে ধারণা, এতদিন সেই ধারণাকে আমি প্রাণপণে আঁক্‌ড়াইয়া ধরিয়াছিলাম—আমার মমতাময় মানব-হৃদয়ের নিকট যাহা অতীব বীভৎসজনক বলিয়া মনে হইয়াছিল সেই মতবাদটিকে পরীক্ষারও অযোগ্য বিবেচনা করিয়াছিলাম; অবশেষে, মাদ্রাজে, ঐ মতবাদকে আমি একেবারেই অগ্রাহ্য করি; অবশ্য মাদ্রাজে, ঐ মতবাদটি বৌদ্ধধর্ম্মের আরও নির্ম্মম নিষ্ঠুর আকারে আমার সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিল। কিন্তু এখন দেখ, যে মতবাদ কোন্ পুরাকালে আমাদের রহস্যময় পূর্ব্বপুরুষেরা পরিব্যক্ত করিয়াছিলেন, আমার দীক্ষাগুরু সেই সমগ্র মতবাদটি একটু একটু করিয়া ক্রমশ আমার উপর চাপাইয়া দিয়াছেন; এবং অনেক অবর্ণনীয় ভয়-আশঙ্কার পর, এখন দেখিতেছি আমার দীক্ষাগুরুর উপদেশের মধ্যে যেটুকু সান্ত্বনা পাওয়া যায় তাহাই অগত্যা আমাকে মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিতে হইবে।

 এই উপদেশের ফলে,—তত্ত্বজ্ঞানীদের ধ্যানলব্ধ বিচ্ছেদ-তত্ত্বটি আমার অন্তরের অন্তস্থলে প্রবেশ করিতে আরম্ভ করিয়াছে। যে সকল প্রিয়জনকে আমি হারাইয়াছি তাঁহাদের স্মৃতির সহিত এখন আর একটা যাতনাময় জিজ্ঞাসা সংযুক্ত নাই। অবশ্য তাঁহারা জীবিত আছেন, কিন্তু পীড়নকারী ও মায়াময় আমিত্ব হইতে তাঁহারা প্রায় বিমুক্ত। দূর