পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

শিলাখণ্ড গণেশ ও বিষ্ণুর মূর্ত্তি বলিয়া পূজিত; গঠন-হীন হইলেও এখনও উহাতে গণেশ ও বিষ্ণুর কতকটা সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। সুন্দরসুন্দর রঙের পাখী,—কাহারও বা ফেরোজা মণির মত নীল-রং, কাহারও বা মরকত মণির মত সবুজ-রং—উহারা বিশ্বস্তভাবে আমাদের খুব কাছে আসিয়া বসিতেছে;—উহারা মানুষকে ভয় করে না, কেননা এখানে কেই উহাদিগকে হত্যা করে না। এই সমস্ত প্রদেশের উপর মূর্ত্তিমান শান্তিরস যেন স্তব্ধভাবে পক্ষ বিস্তার করিয়া রহিয়াছে।

 এখানে ওখানে অট্টালিকা ও সমাধি-মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ স্তুপাকারে অবস্থিত—তাহাতে বৃক্ষের শাখা প্রশাখা ও শিকড় জড়াইয়া রহিয়াছে; উহার উপর ক্ষুদ্র গ্রাম সকল স্থাপিত;—দেবালয় ও সমাধিস্থানের পুরাতন প্রাচীরে এখানকার কুটীর-সকল নির্ম্মিত হইয়াছে।

 যে সময়ে বৌদ্ধধর্ম্ম বিস্তার লাভ করে, সেই সময়ে কতকগুলি বৌদ্ধমঠ নির্ম্মিত হইয়াছিল; তাহার পর, দেশের উপর দিয়া যখন মুসলমান ধর্ম্মের প্রচণ্ড স্রোত বহিয়া যায়, তখন ঐ সকল মঠ মস্‌জিদে পরিণত হয়; আবার যখন প্রাচীন ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম আসিয়া দেশকে পুনরধিকার করে, তখন আবার ঐ সকল মস্‌জিদ পরিত্যক্ত হয়। এই সকল পরিত্যক্ত মস্‌জিদ; সন্ন্যাসী যোগী ও যোদ্ধাদিগের এই সকল সমাধি-মন্দির;—সমস্তই, আম্রকানন ও কদলীবনের নালিন ছায়ায় মিশিয়া গিয়াছে; ধর্ম্মোন্মত্ত প্রত্যেক আক্রমণকারীর ইচ্ছামত, বড় বড় প্রস্তরখণ্ড কতবার ওলট্‌পালট্‌ হইয়া গিয়াছে—উহার একদিকে বুদ্ধের পদ্ম এবং অপরদিকে কোরাণের বয়েৎ অঙ্কিত রহিয়াছে। এই সকল প্রশান্ত ধ্বংসাবশেষের উপরে এখনকার কুটীরবাসী লোকেরা প্রাচীন পদ্ধতি-অনুসারে, শিল্পকর্ম্মে ব্যাপৃত, উহারা রেশমের কোমরবন্দ বুনিতেছে; উহার সূতাগুলা তৃণের উপর প্রসারিত হইয়া কথন কখন সমাধি ভূমির উপর দিয়া‌ও চলিয়া গিয়াছে; উহারা মলমল-কাপড়ে রং করিতেছে;