পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্য প্রভাত।
৩৭১

বারাণসী যেমন একদিকে ধর্ম্মবিষয়ে গুহ্যতন্ত্রী, তেমনি আবার পার্থিব বিষয়ে ইন্দ্রিয়োন্মাদক। বারাণসীর সমস্ত লোক কেবল পূজাঅর্চ্চনা ও মৃত্যুরই চিন্তা করে; ইহা সত্বেও, বারাণসীর সমস্ত পদার্থই যেন নেত্র প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গণকে ফাঁদে ফেলিবার জন্য জাল বিস্তার করিয়া রাখিয়াছে। আমি জানি না, এরূপ স্থান আর দ্বিতীয় আছে কিনা। বারাণসী যেমন মানুষকে একদিকে ত্যাগের দিকে,—তেমনি আবার তাহা হইতে দূরে—ভোগের দিকেও সত্ত্বর লইয়া যাইতে সমর্থ। আলোক, বর্ণচ্ছটা, আর্দ্র শাড়ী-পরিহিতা, অর্দ্ধনগ্না মদালসনয়না নবযুবতী—এই সমস্তই ইন্দ্রিয়ের ফাঁদ। পুরাতনী গঙ্গানদীর বরাবর ধারে-ধারে ভারতের অতুলনীয় নারীরূপের হাট বসিয়াছে...

 আমার আদেশের অপেক্ষা না করিয়াই আমার মাঝিমাল্লারা প্রতিদিনের ন্যায় আজও নৌকাকে আবার উজান বাহিয়া লইয়া গেল। আমরা সেই পুরাতন প্রাসাদ-অঞ্চলের সম্মুখে উপনীত হইলাম। স্থানটি অতীব নির্জ্জন ও ধ্যানচিন্তার অনুকূল...আজ অপরাহ্নে তত্ত্বজ্ঞানীদের সেই ক্ষুদ্র গৃহে আবার প্রত্যাগমন করিব; ভয়-মিশ্রিত একটা মনের টানে আমি সেইখানে যাইতেছি। তাঁহাদের যে উপদেশ প্রথমে আমার চিত্ত আকর্ষণ করিতে পারে নাই, আমার নিকট বীভৎস-ভীষণ বলিয়া মনে হইয়াছিল, এখন তাহাই ক্রমশ আমার মনকে অধিকার করিতেছে; ইহারই মধ্যে তাঁহারা আমার পূর্ব্ব-জীবনের কেন্দ্রটিকে টলাইয়া দিয়াছেন; মনে হয় যেন সেই মহা বিশ্বাত্মার সহিত বিলীন করিবার জন্য, তাঁহাদেরই ন্যায়, আমার অন্তরস্থ ক্ষুদ্র আত্মাটিকেও তাঁহারা ছেদন করিয়াছেন...

 তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন-“যাহা তোমা হইতে ভিন্ন, যাহা তোমার আত্মার বাহিরে অবস্থিত, তাহাই তোমার কামনার বিষয় হইতে পারে; কিন্তু যদি তুমি জানিতে পার যে, তোমার চৈতন্যের অন্তর্গত সমস্ত বিষয় তোমাতেই