পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭২
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

রহিয়াছে, এবং সমস্ত বিশ্বের সার বস্তুটি তোমার মধ্যেই অবস্থিত, তখন তোমার সমস্ত কামনা তিরোহিত হয় এবং সমস্ত শৃঙ্খল বিলীন হইয়া যায়।”

 “স্বরূপত তুমি ঈশ্বর। এই সত্যটি যদি তোমার হৃদয়ে মুদ্রিত করিতে পার, দেখিবে,—যাহা হইতে সমস্ত দুঃখ যাতনা সমুদ্ভত হয়, সেই মায়াময় সসীমভাব সমূহ—সেই পৃথক্‌ সত্তার বাসনা-সকল স্খলিত হইয়া পড়িবে।...”

 সেই রহস্যময় পুরাতন প্রাসাদের ধার দিয়া আমরা চলিয়া গেলাম। যাহারা জলের উপর চুল আছড়াইয়া—পরে সেই চুল কাঁধের উপর ফেলিয়া দেয়—আর চুল হইতে জল ঝরিয়া পড়ে—সেই সব রমণীদের আর দেখিতে পাইলাম না; ঘাটের সিড়িতে—অন্ধকারের উচ্চ দেয়ালের পাদদেশে, কেহই নাই। কিন্তু হঠাৎ একটা দ্বার উদ্‌ঘাটিত হইল—রাজপ্রাসাদের নিম্নতল-গহ্বরের গুরুভার বৃহৎ দ্বার;—এক মৌসমের জন্য, এই গহ্বরটি প্রতিবৎসর নদীর জলে নিমজ্জিত থাকে। সৌর করে উদ্ভাসিত হইয়া, একটি রমণী দ্বারদেশে আসিয়া দাঁড়াইল;—এই সব বিষন্ন প্রকাণ্ড প্রস্তর-রাশির মধ্যে একটি ক্ষুদ্র বিদ্যুন্ময়ী স্বপ্নমূর্ত্তি। পরিধানে রূপালি জরির পাড়ওয়ালা বেগ্‌নি রঙ্গের একখানি শাড়ী—এবং নারাঙ্গীজর্দ্দা রঙ্গের একটি ওড়্‌না। ওড়নাখানি রোমক-মহিলাদের ন্যায় মস্তকের কেশের উপর ন্যস্ত;—সম্মুখস্থ জনশূন্য সমভূমির দিকে তাকাইয়া না জানি কি দেখিতেছে, এবং চোখ্‌ ঢাকিবার জন্য নগ্নবাহু উঠাইয়া রহিয়াছে—সেই ভারত-সুলভ বড় বড় চোখ্‌—যাহার মধ্যে কি একটা অনির্ব্বচনীয় মোহিনী-শক্তি আছে। এই সব বেগ্‌নি ও জর্দ্দারঙের বস্ত্র,—উহার সুন্দর বক্ষদেশ, উহার সুনম্য নিতম্বের রেখা-নিচয় ফুটাইয়া তুলিয়াছে; উহার তরুণ দেহের সহিত সমস্তই বেশ মিশ্‌ খাইয়াছে…

 তত্ত্বজ্ঞানীরা আমাকে বলিয়াছিলেন-“তিনিই আমি, আমিই তিনি,