পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

রন্ধ্র-জান্‌লা আছে। পশ্চাদ্ভাগে ছোট একটি গোল দরজা, তাহার মধ্য দিয়া, মাথা হেঁট করিয়া, এই সচক্র শবাধারের মধ্যে প্রবেশ করিতে হয়।

 আমার গাড়ির প্রায় গা ঘেঁষিয়া, ঠিক পিছনে, আমার চাকরবাকরদিগের ও জিনিষপত্রের গাড়িটি চলিয়াছে। যে দুইটি দীর্ঘকায় নিরীহ বলদ ঐ গাড়ি টানিতেছে, উহারা আমার খুব নিকটবর্ত্তী; আমি গাড়ির মধ্যে শুইয়া সর্ব্বদাই দেখিতে পাই, বলদ-দুটি যেন আমার পা ছুঁইয়া রহিয়াছে। উহার কি নিরীহ জানোয়ার! চালক উহাদের শুধু নাকে দড়ি দিয়া চালাইতেছে; পাছে অনিচ্ছাক্রমেও কাহারো অনিষ্ট হয় তাই যেন উহাদের শিং-দুটি ও পিছনদিকে পিঠের দাঁড়ার উপর বাঁকিয়া পড়িয়াছে। গাড়ির চালক নগ্নপ্রায়, তাম্রবর্ণ; আশ্চর্য্যরূপে দেহভার রক্ষা করিয়া, সঙ্কীর্ণ যুগকাষ্ঠের উপরে উবু হইয়া বসিয়া, বাহুদুটি হাঁটুর উপর রাখিয়াছে; আর, একটা বেতের চাবুক দিয়া বলদদিগকে প্রহার করিতেছে; কিংবা বানরগুলা রাগিলে যেরূপ শব্দ করে, সেইরূপ মুখের শব্দ করিয়া উহাদিগকে উত্তেজিত করিতেছে।

 কান্তারভূমি, একটার-পর-একটা ক্রমাগত আসিতেছে; যতই অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতেছি, ততই যেন কষ্টকর—এমন কি—অসহ্য হইয়া উঠিতেছে। দূর-দূরান্তরে, কোথাও বা ছোটখাটো ধানের ক্ষেত, কোথাও বা ছোটখাটো কার্পাসের ক্ষেত দেখা যাইতেছে; নতুবা আর সমস্তই মরু—কেবলই মরু—সায়াহ্নসূর্য্যের বিষাদম্লান কিরণচ্ছটায় আলোকিত।

 দিগন্তগগনে “ঘাটে”র গিরিমালা অঙ্কিত; উহা যেন ত্রিবঙ্কুররাজ্যের প্রাকারাবলী। আজ আমরা রাত্রে, একটি যার-পর-নাই সঙ্কীর্ণ সুঁড়িথ দিয়া ঐ প্রাকার উল্লঙ্ঘন করিয়া যাইব।

 সিংহলের বৃষ্টিবর্ষা ও হরিৎ-শ্যামল ক্ষেত্রাদি দেখিয়া-আসিয়া তাহার পর এই সকল শুষ্কভূমি দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয়—উহাতে একটি তৃণও জন্মায় না। শাদাটে রঙের গুঁড়ি—এইরূপ কতকগুলি অদ্ভুত