পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৩৫

তালজাতীয় বৃক্ষ ইতস্তত একাকী দণ্ডায়মান;—উহাদিগকে উদ্ভিজ্জরাজ্যের সামিল বলিয়াই মনে হয় না। সোজা, মসৃণ, প্রকাণ্ড-উচ্চ খোঁটার মত, তলদেশ স্ফীত, তাহার পরেই চরকা-কাঠির ন্যায় হঠাৎ সরু হইয়া ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে। উহাদের অতিদীর্ঘ কাণ্ডের অগ্রভাগে, জ্বালাময় গগনের উচ্চদেশে, শুষ্ক-কঠোর ছোট ছোট একএকগুচ্ছ তালপত্র রহিয়াছে। এই শুষ্কশীর্ণ তরুদিগের ছায়া-চিত্রগুলি, বরাবর রাস্তার দুইধারে, বিষাদম্লান দিগন্তরেখা পর্য্যন্ত—স্থানে স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়। দুই-সারি তরুণ বটবৃক্ষের মধ্য দিয়া এই যে পথটি গিয়াছে, ইহার মধ্যে জনমানব দৃষ্টিগোচর হয় না। মনে হয়, যেন এই পথটি ধরিয়া চলিলে আমরা কোথাও গিয়া উপনীত হইব না। অবসাদজনক উত্তাপ, তালে-তালে অল্প-অল্প ঝাঁকানি, ক্রমাগত গাড়ির একঘেয়ে ক্যাঁচ্‌ক্যাঁচ্‌ শব্দ। এই সবে আমার তন্দ্রা আসিল—আমার চিন্তাপ্রবাহ ক্রমশ তমসাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল।

 প্রায় ৫ ঘটিকার সময় রাস্তার উপর দিয়া অদ্ভূত-ধরণের চারিজন পথিক চলিয়া গেল। আমার চক্ষু এখনো তন্দ্রাবেশে প্রায় অর্দ্ধনিমীলিত; তা ছাড়া, এই একঘেয়ে পথে কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না—তাই হঠাৎ যখন চারিটি মনুষ্যমূর্ত্তি দেখিলাম, তখন ইহাই একটি গুরুতর ঘটনা বলিয়া আমার নিকট প্রতিভাত হইল। ইহারা দীর্ঘকায় পুরুষ—লম্বা পা ফেলিয়া দ্রুত চলিতেছে; নগ্ন গাত্র, একটা শাদা ও লালরঙের ধুতি-পরা, মাথায় একটা লাল পাগ্‌ড়ি। এই বিজন কান্তারের মধ্য দিয়া এই অজ্ঞাত ব্যক্তিগণ, এইরূপ উজ্জ্বলবেশে, এত দ্রুতপদে, না জানি কোথায় যাইতেছে?

 পরে, অল্পে অল্পে, ধীরে ধীরে, এই “ঘুপসি” দম্-আট্‌কানিয়া শয্যাকক্ষের মধ্যে নিদ্রাদেবী আবির্ভুত হইয়া আমার ‘সংজ্ঞা হরণ’ করিলেন—চারিদিকে কি হইতেছে, আমি আর কিছুই জানিতে পারিলাম না।