পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে
৩৭

দেয়ালের কুলুঙ্গিতে, ভূতপ্রেত তাড়াইবার জন্য, ছোট-ছোট নারিকেলতৈলের প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখা হইয়াছে।

 ভৃত্যেরা আমাকে অভিবাদনপূর্ব্বক জাগাইয়া দিল। এখন প্রভাত; শীতল শান্ত ঊষার ইহাই মধুরতম মুহূর্ত্ত। আমরা এখন নাগরকৈল-গ্রামে আসিয়া পৌঁছিয়াছি। আজ সমস্তদিন এইখানে থাকিয়া, সূর্য্যাস্ত-সময়ে আবার যাত্রা আরম্ভ করিব। যে পর্ব্বতমালা গতকল্য আমাদের সম্মুখে, অস্তমান সূর্য্যের কিরণ-উদ্ভাসিত লোহিতগগনে অঙ্কিত দেখিয়াছিলাম, আজ তাহা আমাদের পিছনে পড়িয়াছে। এখন দিগন্তদেশ ম্লান-পাটলবর্ণে রঞ্জিত। রাত্রিতে আমরা এই পর্ব্বতমালা পার হইয়া আসিয়াছি,—এখন আমরা ত্রিবঙ্কুররাজ্যে। এই বারাণ্ডা-ওয়ালা বাড়ীটি একটি পান্থশালা; ইহার সম্মুখে আমাদের গাড়ি আসিয়া থামিল। শুভ্রবসনধারী একজন ভারতবাসী দুই হস্তে স্বকীয় ললাট স্পর্শ করিয়া আমার সম্মুখে নতশির হইলেন। ইনি পান্থশালার অধ্যক্ষ। মহারাজের আদেশানুসারে, ইনি আমার বাসের জন্য এই বাড়ীটি ঠিক করিয়া রাখিয়াছেন।

 ভারতীয় অন্যান্য গ্রামের পান্থশালার ন্যায়, এ পান্থশালাটিও সাদাসিধা একতালা গৃহ। তিন-চারিটি শাদা-ধব্‌ধবে চুনকাম-করা কামরা—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, প্রায় খালি, শুইবার জন্য শুধু কতকগুলি বেতে-ছাওয়া খাট পাতা। সূর্য্যের প্রখর-উত্তাপ-প্রযুক্ত গৃহের ছাদ গৃহ হইতে চারিদিকে খানিকটা বাহির হইয়া আসিয়াছে, আর কতকগুলো মোটা-মোটা খাটো থাম ঐ ছাদকে ধারণ করিয়া আছে।

 তাহার পর স্নান; স্নানের পর প্রাতরাশ। এই সময়ে, ব্যগ্রতা-বিরহিত ভৃত্যেরা তালপত্রের পাখা দিয়া আমাকে অলসভাবে বাতাস করিতে লাগিল। তাহার পর মধ্যাহ্নের বিষন্নতা; আলোক-উদ্ভাসিত মহানিস্তব্ধতা। মধ্যে মধ্যে কাকেরা আমার কক্ষ-কুট্টিমের তক্তার উপর আসিমা নাচিয়া বেড়াইতেছে।